
ছবি: প্রতীকী
মাছ পুষ্টিকর—এটি উচ্চপ্রোটিনযুক্ত এবং এতে চর্বির পরিমাণ কম। তবে সব মাছ সমান নয়। বিশেষ করে যেসব মাছ ‘ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড’-এ সমৃদ্ধ, সেগুলো হৃদয়-স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) সপ্তাহে অন্তত দুইবার (৬ আউন্স বা প্রায় ১৭০ গ্রাম) মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেয়। তবে প্রশ্ন হলো—সব মাছ কি সমান উপকারী?
মাছ কেন স্বাস্থ্যকর?
মাছের মধ্যে কয়েকটি সাধারণ পুষ্টিগুণ থাকে:
উচ্চমাত্রার প্রোটিন – এটি পেশি তৈরি, কোষ গঠন এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ভিটামিন ও খনিজ – যেমন:
-
আয়রন
-
ভিটামিন ডি ও বি১২
-
সেলেনিয়াম
-
ফসফরাস
-
ম্যাগনেসিয়াম
-
ক্যালসিয়াম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড – বিশেষ কিছু মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকারেল ইত্যাদিতে এই উপকারী ফ্যাট বেশি থাকে। এটি প্রদাহ কমায়, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে, এমনকি স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকিও কমাতে পারে।
৭টি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর মাছ
১. স্যামন (Salmon)
স্যামন শুধুমাত্র সুস্বাদুই নয়, এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটে ভরপুর।
৩ আউন্স স্যামনে থাকে:
-
ক্যালোরি: ১৩৩
-
ওমেগা-৩: ৯৫২ মি.গ্রা.
-
প্রোটিন: ২৩ গ্রাম
সোকআই (বন্য): ২,২৪২ মি.গ্রা.
বিভিন্ন প্রজাতির স্যামনে ওমেগা-৩-এর পরিমাণ আলাদা:
-
চিনুক (বন্য): ২,১১৫ মি.গ্রা.
-
আটলান্টিক (চাষ): ৬৪৬ মি.গ্রা.
-
স্যামন পোকে বোল, সুশি, গ্রিল বা বেক করে খাওয়া যায়।
স্যামন পোকে বোল, সুশি, গ্রিল বা বেক করে খাওয়া যায়।
২. ট্রাউট (Trout)
৩ আউন্স রেইনবো ট্রাউটে রয়েছে:
-
ক্যালোরি: ১৪৩
-
ওমেগা-৩: ৮৩৬ মি.গ্রা.
-
প্রোটিন: ২০ গ্রাম
-
ভিটামিন ডি: ৮১% দৈনিক চাহিদা
ট্রাউট ফ্রাই, রোস্ট বা বারবিকিউ করে খাওয়া যায়।
৩. প্যাসিফিক ম্যাকারেল (Pacific Mackerel)
-
ক্যালোরি: ১৭১
-
ওমেগা-৩: ১,৭০৫ মি.গ্রা.
-
প্রোটিন: ২২ গ্রাম
সতর্কতা: কিং ম্যাকারেল উচ্চমাত্রায় পারদ (mercury) বহন করে, তাই এড়িয়ে চলা উচিত। প্যাসিফিক ম্যাকারেল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
৪. সার্ডিন (Sardines)
-
ক্যালোরি: ১৭৭
-
ওমেগা-৩: ৮৩৫ মি.গ্রা.
-
প্রোটিন: ২১ গ্রাম
সার্ডিন সাধারণত ক্যানজাত হিসেবে পাওয়া যায় এবং সেলেনিয়ামে ভরপুর। এটি সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৫. হেরিং (Herring)
-
ক্যালোরি: ১৭৩
-
ওমেগা-৩: ১,৭৭২ মি.গ্রা.
-
প্রোটিন: ২০ গ্রাম
-
ভিটামিন বি১২: ৪৬৫% দৈনিক চাহিদা
হেরিং ক্যানজাত, পিকল্ড বা কিপার (স্মোকড) অবস্থায় খাওয়া যায়।
৬. আনচোভি (Anchovies)
-
ক্যালোরি: ১৭৯
-
ওমেগা-৩: ১,৭৮২ মি.গ্রা.
-
প্রোটিন: ২৪ গ্রাম
-
নাইআসিন (ভিটামিন B3): ১০৬% দৈনিক চাহিদা
সিজার সালাদ এবং পাস্তা রেসিপিতে আনচোভি ব্যবহৃত হয়। এটি একটি স্বাদে ভরপুর মাছ।
৭. আলবাকোর টুনা (Albacore Tuna)
-
ক্যালোরি: ১০৯
-
ওমেগা-৩: ৭৪৮ মি.গ্রা.
-
প্রোটিন: ২০ গ্রাম
টুনা সহজলভ্য এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ হলেও এতে পারদের পরিমাণ কিছুটা বেশি। বিশেষ করে গর্ভবতী, শিশুরা বা দুগ্ধদানকারীদের সাবধানে খেতে হবে।
প্রতিদিন মাছ খাওয়া কি ঠিক?
হ্যাঁ, তবে শর্ত সাপেক্ষে।
দুইটি বিষয় মনে রাখতে হবে:
-
পারদযুক্ত মাছ সীমিত পরিমাণে খান – যেমন: কিং ম্যাকারেল, মারলিন, সোর্ডফিশ
-
অতিরিক্ত আহরণকৃত মাছ এড়িয়ে চলুন – যেমন: অরেঞ্জ রাফি, টাইলফিশ
নিম্ন পারদযুক্ত মাছের তালিকায় আছে:
-
সার্ডিন
-
সালমোন
-
হেরিং
-
ট্রাউট
-
টিলাপিয়া
-
কড
-
ক্যাটফিশ
-
হ্যাডক
মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। তবে সেরা উপকার পেতে হলে বেছে নিতে হবে সঠিক মাছ—যেমন স্যামন, সার্ডিন, ট্রাউট বা ম্যাকারেল। এগুলো ওমেগা-৩ এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন-খনিজে পরিপূর্ণ। একই সঙ্গে পারদ ও পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
সূত্র: https://www.goodrx.com/well-being/diet-nutrition/healthiest-fish-to-eat
রবিউল