সরকারি চাকরির প্রস্তুতি যেভাবে শুরু করবেন

জনকণ্ঠের ‘শিক্ষাসাগর’ পাতায় নিয়মিতভাবে ‘প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি’ নামে একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব প্রকাশিত হচ্ছে। যা আপনার সব ধরনের চাকরির পরীক্ষায় সফলতা আনতে ভূমিকা রাখবে আশা করি।

প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষা আর সরকারি চাকরির পরীক্ষা এক নয়। চাকরির পরীক্ষায় অনেকটাই এলোমেলো হয়ে যায়। জানা বিষয়ও তখন অজানা মনে হয়। তাই সরকারি চাকরির প্রস্তুতিটা একটু ভালভাবেই নিতে হবে। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষা যদি দু’এক নম্বর কম পান, তাহলেও আপনি হয়ত প্রথম হবেন। কিন্তু চাকরির পরীক্ষায় আপনাকে দুই এক নম্বরের জন্যই চাকরিটা হারাতে হবে। তাই কিভাবে সরকারি চাকরির প্রস্তুতিটা শুরু করবেন, সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
যে কোনো চাকরির পরীক্ষায় সাধারণত চার ক্যাটাগরির প্রশ্ন হয়। যেমন: বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান। এছাড়াও এখন আলাদাভাবে তথ্য প্রযুক্তির ওপর প্রশ্ন থাকে। সেটাও সাধারণজ্ঞান ক্যাটাগরিতেই ধরা হয়। কোনো বিষয়ের কোন জিনিসগুলো আপনাকে জানতে হবে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
বাংলা সাহিত্য ও ব্যাকরণ:? উল্লেখযোগ্য কবি-সাহিত্যিকদের জীবন ও সাহিত্যকর্ম, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। গল্প, কবিতা বা উপন্যাসের রচয়িতা থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। ব্যাকরণ অংশে শব্দ, পদ, কারক-বিভক্তি, প্রকৃতি-প্রত্যয়, সন্ধি, সমাস, শুদ্ধ বানান পড়তে হবে। পারিভাষিক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ থেকেও প্রশ্ন আসতে পারে। সন্ধি, সমাস, কারক থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন থাকে, এগুলো প্রশ্নে একপলক দেখামাত্রই যেন উত্তর করা যায়, সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য বোর্ড প্রণীত নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায়ের পাঠ এবং উদাহরণ শিখতে পারলে ভালো হয়।
ইংরেজি: বেসিক গ্রামার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। পড়তে হবে Preposition, Antoûm, Synoûm, Parts of Speech, Tense, Spelling, Right forms of verb, Transformation, Voice, Narration| mvaviYZ Spelling, Right forms of verb, Antoûm, Synoûm থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। বিগত কয়েক বছরের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেখলে বেশ ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। চারটি Preposition থেকে শূন্যস্থানে কোনটি বসবে, গ্রামারের বিচারে কোনো বাক্যটি শুদ্ধ, কোন্টি সঠিক Indirect Speech-এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসে। অনুশীলনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ গাইড এবং ভালো মানের গ্রামার বই পড়তে পারেন। আর খাতায় গুরুত্বপূর্ণ শব্দ লিখে চর্চা করলে কাজে লাগবে।
গণিত: গণিতের সমাধান বের করতে অনেকে বেশি সময় নিয়ে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। পুরনো পাঠ্যক্রমের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করতে হবে। দেখে যেতে হবে এইচএসসি পর্যায়ের বইও। সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর নেওয়া যাবে না। সাধারণ ক্যালকুলেটর নেওয়া গেলেও সময় স্বল্পতার কারণে সব সময় ব্যবহার করতে যাওয়াটা বোকামি। গণিতের প্রস্তুতি এমনভাবে নিতে হবে যেন মুখে মুখেই অঙ্কের বেশির ভাগ সমাধান করে নেওয়া যায়। বারবার চর্চা করলেই এটা সম্ভব। শতকরা, ঐকিক নিয়ম, লাভ-ক্ষতি, ভগ্নাংশ, ধারাপাত এবং বীজগণিতের প্রথম পর্যায়ের কিছু অঙ্ক থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। অনেক সময় দশমিকের গুণ, ভাগ থাকে। জ্যামিতির সাধারণ সূত্র ও সংজ্ঞা থেকেও প্রশ্ন আসে।
সাধারণ জ্ঞান:? এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অভ্যুদয়ের ইতিহাস, জাতীয় বিষয়াবলি থেকে প্রশ্ন আসে। আন্তর্জাতিক অংশে দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়া সম্পর্কিত প্রশ্ন বেশি দেখা যায়। খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, পুরস্কার, দিবস ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে। সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন যেমন বিভিন্ন আবিষ্কার, রোগব্যাধি, বিভিন্ন খাদ্যগুণ, কম্পিউটার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য আজকের বিশ্ব, এমপিথ্রি, নতুন বিশ্ব পড়তে পারেন। বিগত বছরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য পড়তে হবে সাধারণ জ্ঞানবিষয়ক মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বা কারেন্ট ওয়ার্ল্ড। এছাড়াও দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার শিক্ষা সাগর পাতাটিতে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত “প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি” অংশটুকু অনুসরণ করলে নিশ্চিত উপকৃত হবেন।  
চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সরকারি চাকরি  হলে সবচেয়ে নিরাপদ একটি চাকরি। সরকারি চাকরির জন্য একজন প্রার্থীকে অবশ্যই লক্ষ্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী পড়াশোনা করতে হবে। তবেই স্বপ্নের চাকরির দেখা মিলবে। তবে আপনাকে অবশ্যই পজিটিভ হতে হবে। পড়াশোনা পরিকল্পনামাফিক করতে হবে এবং ধৈর্য রাখতে হবে। সর্বোপরি আপনার সেরাটা আপনাকে দিতে হবে। প্রথমত আপনি কি চাকরি চাচ্ছেন তা জানা জরুরি। স্কুলের বইগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেন যা আপনার বেসিককে শক্তিশালী করবে। যেমন- ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির গণিত বই, নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বই আর একটা ভালো ইংরেজি গ্রামার বই।
বর্তমানে চাকরির বাজারের নাজেহাল অবস্থা। আর এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাকরিপ্রার্থীরা। তবে এ কথাটা অধিক সমালোচিত হলেও এটা সত্যি যে, আপনি যদি নিজেকে দক্ষ ও উপযুক্ত চাকরিপ্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির সামনে তুলে ধরতে পারেন, তাহলে আপনার চাকরি সুনিশ্চিত। আর এর জন্য অন্য কিছু নয়, শুধু আপনাকে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
চাকরিবাজার ডেস্ক