ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ইরানের হয়ে ইসরাইলকে কী জানালো রাশিয়া!

প্রকাশিত: ২১:২০, ২৯ জুলাই ২০২৫

ইরানের হয়ে ইসরাইলকে কী জানালো রাশিয়া!

ছবি: সংগৃহীত

প্রশান্ত মহাসাগর থেকে শুরু করে আর্কটিক, বাল্টিক এবং কাশপিয়ান—বিশ্বের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক অঞ্চলে রাশিয়ার ‘জুলাই স্টর্ম’ নামে চালানো বিশাল সামরিক মহড়া দেখে যে কোনো সামরিক বিশ্লেষকই বলবেন—এটি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের মহড়া। এই মহড়ার কলেবর এবং প্রস্তুতির মাত্রা দেখে রীতিমতো উদ্বেগে পড়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। রাশিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে—তারা ন্যাটোর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বহুগুণে বাড়াচ্ছে, যার প্রকৃত পরিধি বুঝে উঠতে পারছে না ইউরোপের দেশগুলোও।

এই বিশাল মহড়ায় অংশ নিয়েছে ১৫০টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ ও নৌযান এবং সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে অন্তত ১৫ হাজার রুশ সেনা। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এই মহড়ায় রাশিয়ার পাশে ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের শত্রু রাষ্ট্র ইরান। মহড়া শেষ হতেই মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে আবারও সরব হয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি সরাসরি টেলিফোনে কথা বলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে।

ক্রেমলিনের প্রকাশিত বিবৃতি অনুযায়ী, দুই নেতা সিরিয়া পরিস্থিতি, ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক সংঘাত এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্য কূটনৈতিক পথ নিয়ে আলোচনা করেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন স্পষ্টভাবে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার পক্ষে অবস্থান নেন এবং ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে শান্তিপূর্ণ সমাধানে রুশ সহায়তার প্রস্তাব দেন। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়েছে এবং আলোচনামূলক সমাধানে রাশিয়া প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

এর আগে, গত জুনে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যাতে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছিল। জবাবে ইরানও পাল্টা আঘাত হানে ইসরাইলে এবং ১২ দিনের তীব্র সংঘাতের পর মার্কিন মধ্যস্থতায় উভয় দেশ যুদ্ধবিরোতিতে রাজি হয়। ওই যুদ্ধ চলাকালীন ইরানকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয় রাশিয়া ও চীন।

এছাড়া, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর গোলান মালভূমির একাংশে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে ইসরায়েল এবং চলতি মাসের শুরুতেও দামেস্কে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে তারা। এসব হামলার ব্যাখ্যায় ইসরায়েল বলেছে, তারা সংখ্যালঘুদের রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে বাস্তবতা বলছে, এই সংঘর্ষ কেবল থেমে নেই, বরং রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং সামরিক প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।

রাশিয়া, ইরান, সিরিয়া এবং ইসরায়েল—এই চারটি শক্তি এখন এক সংঘর্ষ-পূর্ণ রাজনৈতিক দাবার ছকে আবদ্ধ। যেখানে ‘জুলাই স্টর্ম’ শুধু একটি মহড়া নয়, বরং এক আগাম যুদ্ধের সিগন্যাল।


শেখ ফরিদ 

×