
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার সীমান্ত উত্তেজনা নতুন করে রক্তাক্ত রূপ নিয়েছে। থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী বান নাম ইয়েন প্রদেশের একটি সামরিক স্থাপনা এবং বেসামরিক এলাকায় অবস্থিত একটি হাসপাতাল লক্ষ্য করে কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী রকেট হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে।
থাইল্যান্ডের এক সামরিক কর্মকর্তার বরাতে জানা যায়, হামলায় ব্যবহৃত রকেটগুলো ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘরানার বিএম-২১ টাইপের বিস্ফোরক রকেট। বেসামরিক হাসপাতালে হামলায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে।
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথ বিবৃতিতে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে কম্বোডিয়াকে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যকার এই উত্তেজনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো “এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল” বা পান্না ত্রিভূজ। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওস—এই তিন দেশের সীমান্ত যেখানে মিলিত হয়েছে, সেই এলাকাটিকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া উভয়ই। ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির রয়েছে এ অঞ্চলে, যা এই বিরোধকে আরও জটিল করে তুলেছে।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সীমান্ত সংঘর্ষ চলার পর দুই দেশ ১৫ বছর আগে একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে ফের পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
গতকাল বুধবার কম্বোডিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে এক থাই সেনা গুরুতর আহত হন। এর পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে থাই বিমান বাহিনী কম্বোডিয়ার দুইটি সেনা স্থাপনায় হামলা চালায়। ওই হামলার পরপরই কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এই ‘আগ্রাসনের সমুচিত জবাব’ দেবে।
তারই প্রতিক্রিয়ায় আজকের ভয়াবহ রকেট হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। থাইল্যান্ড এই ঘটনাকে ‘উস্কানিমূলক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
সীমান্তে ফের এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। উভয় দেশকেই উত্তেজনা প্রশমনে সংলাপের পথে ফেরার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে যদি দুই দেশ এখনই সহিংসতা বন্ধ করে কূটনৈতিক সমাধানের পথে না ফেরে।
ছামিয়া