
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকা থেকে বাদ পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র। লন্ডনভিত্তিক বৈশ্বিক নাগরিকত্ব ও আবাসন পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস এর তৈরি করা হেনলি পাসপোর্ট সূচক এর সর্বশেষ ত্রৈমাসিক হালনাগাদ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ১০ নম্বরে অবস্থান করছে। অথচ ২০১৪ সালে দেশটি ১ নম্বরে ছিল।
সূচকটির ২০ বছরের ইতিহাসে এবারই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবচেয়ে নিচে নেমে এসেছে। ১৯৯টি পাসপোর্টের অধিকারীদের জন্য ২২৭টি দেশ ও অঞ্চলে ভ্রমণ সুবিধা বিশ্লেষণ করে এই তালিকা তৈরি করা হয়। এতে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (IATA) এর একচেটিয়া তথ্য ব্যবহৃত হয়।
হেনলি একাধিক দেশকে একই স্কোরে রাখলে একটি মাত্র স্থান হিসেবে গণ্য করে। ফলে নামতে থাকা সত্ত্বেও, প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে ৩৩টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে।
২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবেশের সময়, সিঙ্গাপুর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। দেশটির পাসপোর্টধারীরা ২২৭টির মধ্যে ১৯৩টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন, এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ।
তবে সিঙ্গাপুর কোনোভাবেই বিদেশিদের “সহজে” নাগরিকত্ব দিচ্ছে না। নাগরিকত্ব পেতে হলে অন্তত দুই বছর স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হয়, ‘অর্থনৈতিক অবদান’সহ নানা যোগ্যতা বিবেচনায় আসে এবং পুরুষ আবেদনকারীদের জন্য আবশ্যিক সামরিক সেবাও রয়েছে।
এশিয়ার আধিপত্যের ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ কোরিয়া দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপান এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৯০টি গন্তব্যে প্রবেশাধিকারে অবস্থান নিয়েছে।
ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও ফিনল্যান্ড ১৮৯টি গন্তব্যে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লাক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল ও সুইডেন যাদের প্রবেশাধিকার ১৮৮টি দেশে।
গ্রিস, সুইজারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড ১৮৭টি গন্তব্যে প্রবেশাধিকার নিয়ে পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছে।
তালিকার নিচের দিকে গিয়ে দেখা যায়, আফগানিস্তান রয়েছে সবচেয়ে নিচে, ৯৯ নম্বরে। আফগান পাসপোর্টধারীরা মাত্র ২৫টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়া যেতে পারেন। সিরিয়া রয়েছে ৯৮ নম্বরে (২৭টি গন্তব্য), এবং ইরাক ৯৭ নম্বরে (৩০টি গন্তব্য)। শীর্ষ ও সর্বনিম্ন পাসপোর্টের মধ্যে ১৬৮টি গন্তব্যের বিশাল ব্যবধান রয়েছে।
যুক্তরাজ্য এক ধাপ পিছিয়ে এবার ষষ্ঠ স্থানে, ১৮৬টি দেশে প্রবেশাধিকার নিয়ে। অস্ট্রেলিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, মাল্টা ও পোল্যান্ড সপ্তম স্থানে (১৮৫টি গন্তব্য), এবং কানাডা, এস্তোনিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত অষ্টম স্থানে (১৮৪টি গন্তব্য) অবস্থান করছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সংযুক্ত আরব আমিরাত গত এক দশকে তালিকায় ৩৪ ধাপ এগিয়ে এসেছে ৪২তম স্থান থেকে উঠে এসেছে অষ্টম স্থানে। চীনও ২০১৫ সালে ৯৪তম স্থান থেকে উঠে এসেছে ৬০তম স্থানে।
নবম স্থানে রয়েছে ক্রোয়েশিয়া, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া। আর ১০ম স্থান ভাগ করে নিয়েছে আইসল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারীরা ১৮২টি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
তবে এই র্যাঙ্কিংয়ের পতনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতিও যোগ হচ্ছে চাপ। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রণীত এক অভ্যন্তরীণ নীতিমালার আওতায়, অচিরেই যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণেচ্ছু বিদেশিদের একটি নতুন “ভিসা ইন্টিগ্রিটি ফি” দিতে হবে, যার পরিমাণ কমপক্ষে ২৫০ মার্কিন ডলার। এটি বিদ্যমান ভিসা ফি ছাড়াও গুণতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন পর্যটন সংগঠন এই নতুন ফিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছে, কারণ এটি পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসের চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান এইচ. কেলিন বলেন, “এই সূচক দেখায় বৈশ্বিক চলাচলে কতটা প্রতিযোগিতা বাড়ছে। শীর্ষে টিকে থাকতে হলে কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় ও কৌশলগত হতে হয়।”
এছাড়া আরটন ক্যাপিটাল নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠান তাদের পাসপোর্ট পাওয়ার র্যাঙ্ক ২০২৫ প্রকাশ করেছে, যেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত রয়েছে শীর্ষে, ১৭৯টি দেশে ভিসা ছাড়াই যাতায়াতের সুযোগ নিয়ে।
২০২৫ সালের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকা (হেনলি সূচক অনুযায়ী):
-
সিঙ্গাপুর – ১৯৩ গন্তব্য
-
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া – ১৯০
-
ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, স্পেন – ১৮৯
-
অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লাক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, সুইডেন – ১৮৮
-
গ্রিস, সুইজারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড – ১৮৭
-
যুক্তরাজ্য – ১৮৬
-
অস্ট্রেলিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড – ১৮৫
-
কানাডা, এস্তোনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত – ১৮৪
-
ক্রোয়েশিয়া, লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া – ১৮৩
-
আইসল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র – ১৮২
Jahan