
ছবিঃ সংগৃহীত
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বড় এক রাজনৈতিক ধাক্কা খেয়েছেন, যখন তার দীর্ঘদিনের মিত্র, ধর্মীয় দল ইউনাইটেড টোরা জুডাইজম (UTJ) জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে সঙ্গে সঙ্গে নেতানিয়াহুর সরকার পতন হচ্ছে না বটে, তবে এটি তার সরকারের জন্য বড় এক হুমকি তৈরি করেছে। বিশেষ করে গাজা যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা চলছে এমন এক সময়ে এ ধরণের রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
জোটের উপর নির্ভরশীল নেতানিয়াহু
নেতানিয়াহু বহুদিন ধরেই ধর্মীয় দলগুলোর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছেন। বর্তমানে UTJ বেরিয়ে গেলে তার হাতে থাকবে মাত্র ৬১টি আসন — ১২০ আসনের সংসদে এটি অত্যন্ত দুর্বল সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
ধর্মীয় দলটি বলছে, তারা সেনা খসড়া আইন নিয়ে মতপার্থক্যের কারণেই জোট ছেড়েছে। নতুন প্রস্তাবিত আইনে ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘদিনের সামরিক বাহিনীতে যোগদানের ছাড়পত্র বাতিল করা হচ্ছে। ইসরায়েলে অধিকাংশ ইহুদি নাগরিকের জন্য সেনাবাহিনী বাধ্যতামূলক হলেও বহু ধর্মীয় তরুণ সেই দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছেন, যা সমাজে গভীর বিভক্তি সৃষ্টি করেছে।
ইসরায়েলি সমাজে দীর্ঘদিনের বিতর্ক
দেশের ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো মনে করে, ধর্মীয় পাঠশালায় পূর্ণসময় ধর্মচর্চা করে তারা জাতির সেবা করছেন। কিন্তু অধিকাংশ সাধারণ নাগরিক একে বৈষম্য হিসেবে দেখেন। তারা মনে করেন, ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষ সেনা দায়িত্ব এড়িয়ে চলার পাশাপাশি রাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছেন — যা সাম্যবিরোধী।
গত বছর ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছিল, কোনো নতুন আইন ছাড়াই এই ছাড় অব্যাহত রাখা বেআইনি। তাই নেতানিয়াহুর সরকার চেষ্টা করছিল একটি নতুন আইন পাস করতে, কিন্তু সরকারিভাবেই সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মাঝেই টানাপোড়েন
জোটের ধর্মীয় দলটি ৪৮ ঘণ্টার নোটিশ দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নেতানিয়াহু আপোষের চেষ্টা করবেন, তবে আদালতের সিদ্ধান্ত এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ সেই প্রচেষ্টাকে কঠিন করে তুলবে।
একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও দেশীয় রাজনৈতিক চাপের মাঝে পড়েছেন নেতানিয়াহু। ট্রাম্প প্রশাসন চায় ইসরায়েল দ্রুত যুদ্ধ শেষ করুক, কিন্তু তার নিজের জোটের ডানপন্থী দলগুলো যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে চায় যতক্ষণ না হামাস পুরোপুরি ধ্বংস হয়।
নেতানিয়াহুর জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে?
পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, আরও কোনো দল জোট ছাড়লে নেতানিয়াহু কার্যত সংখ্যালঘু সরকার চালাতে বাধ্য হবেন। এতে তার পক্ষে দেশ শাসন করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
বর্তমানে নির্বাচন নির্ধারিত আছে অক্টোবর ২০২৬-এ, কিন্তু নেতানিয়াহু যদি নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারেন — যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় নতুন কোনো আরব দেশকে সঙ্গে নিয়ে কূটনৈতিক চুক্তি করতে পারেন — তাহলে তিনি আগেই নির্বাচন ডাকতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক গায়িল তালশির বলেন, “নেতানিয়াহু আগামী ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ ও খসড়া ইস্যু থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে চাইবেন। এরপর যুদ্ধ শেষ করে জিম্মিদের ফিরিয়ে এনে জনগণের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করবেন।”
নেতানিয়াহুর সরকার এখন এক সংকটময় মুহূর্ত পার করছে। ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিদ্রোহ, যুদ্ধবিরতির চাপ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মাঝে তার সরকার কতদিন টিকে থাকতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মারিয়া