ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

রেলপথে চাল ভারতের: উত্তর-পূর্ব ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন অক্ষ ভাঙতে ভারতের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ১৮:১০, ১১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:১০, ১১ জুলাই ২০২৫

রেলপথে চাল ভারতের: উত্তর-পূর্ব ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশ-চীন অক্ষ ভাঙতে ভারতের পরিকল্পনা

ছবিঃ সংগৃহীত

২০২৫ সাল। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় উন্নয়নের গতি বাড়ছে—তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা আসছে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। ২০৩০ সালের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যকে রেলপথে মূল ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা এখন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।

এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে একটি খুবই বাস্তব সংকট—শিলিগুড়ি করিডোর। ‘চিকেনস নেক’ নামেই যেটি বেশি পরিচিত, এটি একটি মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া ভূখণ্ড, যেটি ভারতের মূল অংশকে পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত রাখে। নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া এই করিডোর ভারতের সেনাবাহিনী, রসদ, এবং সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা।

এই করিডোরে যদি কখনও সামান্য অস্থিরতাও তৈরি হয়, তাহলে পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতের আটটি রাজ্য কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে। শুধু কৌশলগত ভাবেই নয়, মানবিক দিক থেকেও এটি একটি বিপদজনক নির্ভরতা। আর ঠিক সেই কারণেই, ভারত সরকার উত্তর-পূর্বকে রেলপথে শক্তভাবে যুক্ত করার দিকে এগোচ্ছে।

মিজোরামে রেল 
এই রেল-যাত্রায় সবচেয়ে সাম্প্রতিক ও গর্বের সংযোজন মিজোরামের বাইরাবি-সাইরাং রেলপথ। প্রায় ₹৮,০০০ কোটি খরচে নির্মিত এই ৫১ কিমি দীর্ঘ রেললাইনটি এখন প্রায় প্রস্তুত উদ্বোধনের জন্য। এটি শুধু মিজোরামের রাজধানী আইজলকে ভারতের রেলনেটওয়ার্কে যুক্ত করেনি, বরং এক নতুন অধ্যায়ও লিখে দিয়েছে। ৪৮টি সুড়ঙ্গ, ৫৫টি বড় সেতু, অসংখ্য ছোট সেতু, রোড ওভারব্রিজ ও আন্ডারব্রিজ দিয়ে গঠিত এই প্রকল্প রীতিমতো প্রকৌশলের এক কীর্তি। এমন একটি সেতু রয়েছে, যার উচ্চতা কুতুব মিনারের থেকেও ৪২ মিটার বেশি!

নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও সিকিম – এগিয়ে চলেছে নতুন পথে
নাগাল্যান্ডের দিমাপুর-কোহিমা রেলপথ এবং মণিপুরের জিরিবাম-ইমফল রেললাইন এখন নির্মাণাধীন। বিশেষ করে মণিপুরের পাহাড়ি পথে নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে পিয়ার ব্রিজ এবং প্রায় ১০ কিমি দীর্ঘ সুড়ঙ্গ — যা শুনলেই গর্বের অনুভব হয়।

সিকিমও পিছিয়ে নেই। সিভোক-রংপো রেললাইন প্রকল্প (৪৪.৯৬ কিমি) যখন শেষ হবে ২০২৭ সালের মধ্যে, তখন গ্যাংটকও প্রথমবারের মতো সরাসরি ভারতের মূল রেলপথে যুক্ত হবে।

কিন্তু মেঘালয়ে পথটা এখনও বন্ধ
এদিকে মেঘালয়ে রেল যোগাযোগ স্থাপনে কিছুটা থমকে গেছে পরিকল্পনা। স্থানীয় জনগণ উদ্বিগ্ন—তাঁদের আশঙ্কা, রেললাইন হলে বাইরের লোকজন এসে বসতি গড়বে, তাদের সংস্কৃতি ও জীবনে প্রভাব ফেলবে। মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা আশ্বাস দিয়েছেন—সরকার বিকল্প পথ খুঁজছে এবং জনগণের মত ছাড়া কোনও প্রকল্প এগোবে না।

কেন এত তাড়া এই রেলপথ তৈরির?
কারণটা শুধু উন্নয়ন নয়, অস্তিত্বের প্রশ্ন। শিলিগুড়ি করিডোর যদি একদিন অকেজো হয়ে পড়ে, তাহলে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মানুষ মূল ভারতের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। ভারতের ইকোনমিক টাইমসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক নেতার উত্তেজনক বক্তব্য ও চীনের সীমান্তে তৎপরতা এই ভয় আরও বাস্তব করে তুলেছে। 

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বারবার বলেছেন—“চিকেনস নেকের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। আমাদের নিজস্ব বিকল্প তৈরি করতে হবে।”


উত্তর-পূর্ব ভারত, যাকে এতদিন ‘দূর’ বলে মনে হতো, এখন ধীরে ধীরে ভারতের মূল হৃদয়ের কাছাকাছি চলে আসছে—রেললাইন ধরে, সুড়ঙ্গ পেরিয়ে, সেতুর উপর দিয়ে।

এই রেলপথ শুধু মানুষ বা মালপত্র নয়, আস্থা, সংহতি ও ভবিষ্যতের আশাবাদ বইছে—এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

তথ্যসূত্রঃ https://m.economictimes.com/industry/transportation/railways/train-to-northeast-how-india-plans-to-trample-bangladesh-china-unholy-axis-through-railways-in-next-few-years/articleshow/122339750.cms

 
 

মারিয়া

×