
ছবি: সংগৃহীত
স্পেনের ভিগো শহরের একটি রেস্টুরেন্টে ইসরায়েলি পর্যটকদের সঙ্গে প্রকাশ্য বৈষম্যমূলক আচরণ করলেন ম্যানেজার। শুধু বের করে দেওয়াই নয়, তাদের উদ্দেশ্যে চড়া সুরে বলেন, “আপনারা ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছেন। গাজায় গিয়ে বিয়ার খান।” তিনি ফিলিস্তিনের সমর্থনে স্লোগানও দেন।
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু ইসরায়েলি পর্যটক সেই রেস্টুরেন্টে পানি অর্ডার করলেও, তাদের উচ্চারণ শুনে ম্যানেজার বুঝে ফেলেন তারা ইসরায়েলি নাগরিক। এরপরই তাদের রেস্টুরেন্ট ত্যাগের নির্দেশ দেন। ম্যানেজারের এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্য শুনে পর্যটকরা অর্ডার করা পানিও না খেয়ে চুপচাপ বেরিয়ে যান। ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে সংবাদমাধ্যম TRT Global।
তবে এই ঘটনাটি ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। স্পেন গত কয়েক বছর ধরেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে।
২০২৩ সালে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে স্পেনের বড় শহরগুলোতে শুরু হয় ব্যাপক মিছিল। এরপর স্পেন সরকার ঘোষণা দেয়, তারা আর ইসরায়েলের জন্য নতুন কোনো অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স দেবে না।
২০২৪ সালে স্পেনের শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথ গবেষণা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এরপর স্পেনের পার্লামেন্টে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বিতর্ক হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে ২০২৫ সালের মে মাসে স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে একসঙ্গে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৭টি দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বেলজিয়াম, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স স্থগিত করেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে। ছাত্র ও শিক্ষকরা একাডেমিক বয়কটের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে।
এছাড়া, ইউরোপের আইনপ্রণেতারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের আহ্বান জানিয়েছেন। অ্যামনেস্টি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বহু মানবাধিকার সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও বয়কটের প্রচারণা চালাচ্ছে।
এখন ইউরোপের অনেক শহরে নিয়মিত হচ্ছে ইসরায়েল বিরোধী মিছিল ও গণসমাবেশ। ভিগোর রেস্টুরেন্টের ঘটনাটি যেন সেই বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনেরই একটি প্রতিচ্ছবি।
শেখ ফরিদ