
ছবিঃ সংগৃহীত
রাশিয়া আবার ভারতের দিকে হাত বাড়িয়েছে—এবার এক নতুন প্রস্তাব নিয়ে। তারা চায়, ভারত যেন তাদের Su-57 এবং Su-35 যুদ্ধবিমান কেনে। শুধু কেনা নয়, সঙ্গে থাকছে প্রযুক্তি স্থানান্তর, দেশে তৈরি করার সুযোগ এবং দ্রুত সরবরাহের প্রতিশ্রুতি। তবে একটি বড় শর্তও আছে—Su-57-এর ইঞ্জিন এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে যে, ভারতের নাসিকে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (HAL)-এর কারখানায় Su-57E মডেলের উৎপাদন শুরু করা যেতে পারে। এখানেই আগে ভারতীয় বিমানবাহিনীর ২২০টিরও বেশি Su-30MKI তৈরি হয়েছিল। রাশিয়া বলছে, এবার তারা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ তৈরির সুযোগ দেবে এবং এমনকি বিমানটির সোর্স কোডও ভাগ করে নেবে—যা একপ্রকার বিরল উদারতা।
ভারতের জন্য কী সুযোগ?
এই প্রস্তাবের মানে হলো, ভারত চাইলে নিজের তৈরি অস্ত্র এবং সেন্সর যেমন ‘অস্ত্রা’ মিসাইল, ‘রুদ্রাম’ অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল কিংবা ‘ভিরুপাক্ষ’ AESA রাডার এই বিমানে ব্যবহার করতে পারবে। রাশিয়া দাবি করছে, এই সহযোগিতা শুধু Su-57 কেনা নয়, বরং ভারতের নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির পথও খুলে দিতে পারে।
রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি অনুসারে, প্রথম ২০ থেকে ৩০টি Su-57E বিমান তারা ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে সরবরাহ করতে পারবে। পূর্ণ ৭০ থেকে ১০০টি বিমান আসতে ২০৩০ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত সময় লাগবে।
তবে চিন্তার কারণও আছে
ভারত কিন্তু ২০১৮ সালেই Su-57 প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল, কারণ সে সময় বিমানটি আধুনিক পঞ্চম প্রজন্মের মান পূরণ করতে পারেনি। এখন আবার সেই বিমানের প্রস্তাব আসায় অনেকেই দ্বিধায় পড়েছেন।
আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার পক্ষে যন্ত্রাংশ সরবরাহ বা রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে ভারতীয় Su-30 বহরের প্রায় ৪০% বিমান যন্ত্রাংশের অভাবে মাঠে পড়ে ছিল।
রাশিয়া বলছে, এই Su-57 বিমানে ভবিষ্যতের AL-51F1 ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে, যেটা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে এবং অন্তত ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
Su-35-এরও অফার এসেছে
Su-57-এর পাশাপাশি, রাশিয়া ভারতের MRFA টেন্ডারের (যেখানে ১১৭টি মাল্টিরোল ফাইটার দরকার) জন্য Su-35S বিমানও অফার করেছে। তাদের দাবি—৩৬ থেকে ৪০টি Su-35S মাত্র ২–৩ বছরের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, রাশিয়ার নিজস্ব উৎপাদন হার বছরে ৬ থেকে ১২টি। অতএব, এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাও জোরালো
ভারত ইতোমধ্যেই ফ্রান্সের রাফালে যুদ্ধবিমান কিনছে, এবং সেখানে স্থানীয় উৎপাদনের সুযোগও থাকছে। রাফালে প্রযুক্তিগতভাবে অনেক ক্ষেত্রেই Su-35-এর চেয়ে এগিয়ে, বিশেষ করে মেটিওর মিসাইল বহনের মতো বৈশিষ্ট্যে।
তবে কেউ কেউ বলছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাফালের পারফরম্যান্স প্রত্যাশা অনুযায়ী না হওয়ায় ভারত হয়তো বিকল্পের দিকে তাকাতে পারে।
তবুও, ভারতের সিদ্ধান্ত সহজ হবে না। একদিকে প্রযুক্তি হস্তান্তরের লোভনীয় প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে বাস্তবতার কঠিন দেয়াল। এখন দেখার বিষয়, ভারত রাশিয়ার এই আধা-তৈরি অফার গ্রহণ করে কি না।
মারিয়া