
ছবি: সংগৃহীত
মালিতে তিন ভারতীয় নাগরিক অপহৃত হওয়ার এক সপ্তাহ পার হলেও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এখনও তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে কোনও তথ্য পাননি। তাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মালির একটি সিমেন্ট কারখানায় কর্মরত ওই তিনজনকে “সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের একটি দল জোরপূর্বক অপহরণ করে” গত মঙ্গলবার।
মালির সরকার এখনও এই অপহরণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে ঠিক যেদিন অপহরণ ঘটে, সেদিনই আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠন জামা’আত নুসরাত আল-ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (JNIM) মালির বিভিন্ন শহরে একাধিক হামলার দায় স্বীকার করে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, মালিতে বর্তমানে প্রায় ৪০০ ভারতীয় বসবাস করছেন। ১৯৯০-এর দশক থেকেই ভারতের সঙ্গে মালির বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে।
এই ঘটনা তার আগের মাসের একটি অপহরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলেই মনে করছেন অনেকে। গত এপ্রিল মাসে নাইজারে পাঁচ ভারতীয় নাগরিক অপহৃত হন, যেখানে একইসঙ্গে এক ডজন সৈন্য নিহত হয়েছিলেন। তাঁদের অবস্থান সম্পর্কেও এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
নাইজার, মালি ও বুরকিনা ফাসো দীর্ঘদিন ধরে আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট (IS)-এর সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়ছে। ২০১২ সালে মালির উত্তরে এই জঙ্গি তৎপরতা শুরু হয় এবং পরে তা আশপাশের দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।
গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স (GTI) মালিকে সহিংসতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই সাহেল অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলায় বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অর্ধেকের বেশি ঘটে।
তিনজন অপহৃত কর্মী মালির কায়েস শহরে অবস্থিত ডায়মন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরি-তে কাজ করতেন। কারখানাটি ভারতীয় প্রসাদিত্য গ্রুপ পরিচালিত হলেও এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
ঘটনার দিনই মালির বিভিন্ন সেনাঘাঁটিতে একযোগে জিহাদিদের হামলা হয়। কায়েস শহরের একজন বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, “সেদিন চারপাশে শুধু গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।”
অপহৃতদের পরিবারগুলি এখন চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের অনেকেই বলছেন, এখনও পর্যন্ত ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খুব সামান্য তথ্যই পেয়েছেন।
পানাড ভেঙ্কটরামণা, যিনি ঐ সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন, তাঁর মা নার্সাম্মা বলেন, “৩০ জুন ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। সে বলেছিল কাজে যাচ্ছে, পরে ফোন করবে। তিন দিন পর কারখানা থেকে একটি ফোন আসে, কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি কী বলছিল। পরে টেলিভিশনে দেখেই জানতে পারি ও অপহৃত হয়েছে।”
ভেঙ্কটরামণা ভারতের ওডিশা রাজ্যের বাসিন্দা। তাঁর পরিবার স্থানীয় পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে এবং তাঁদের উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়েছে।
এদিকে, ওডিশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-কে আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ভেঙ্কটরামণার "নিরাপদ ও দ্রুত মুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ করুন।"
অপহৃত আরেকজন আমারালিঙ্গেশ্বর রাও দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা রাজ্যের বাসিন্দা। তিনি ওই কারখানায় সহকারী মহাব্যবস্থাপক (Assistant GM) হিসেবে কাজ করতেন।
তাঁর বাবা কূরাকুলা ভেঙ্কটেশ্বরলু বিবিসিকে বলেন, “ছেলে আট বছর আগে মালিতে গিয়েছিল, কারণ ভারতে বেতনে সংসার চালানো কঠিন ছিল। তার তিনটি সন্তান রয়েছে।”
তিনি জানান, রাও আসছে অক্টোবর মাসে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন এবং ইতিমধ্যেই টিকিট কেটে রেখেছিলেন। “কিন্তু এখন আমরা জানিও না কখন ওকে আবার দেখবো,” দুঃখভরে বললেন তিনি।
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা