ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ভারতের আকাশপথ কি নিরাপদ? বাড়তে থাকা উদ্বেগের মধ্যে বিমান নিরাপত্তা সংস্থার ব্যাখ্যা

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৪৭, ৯ জুলাই ২০২৫

ভারতের আকাশপথ কি নিরাপদ? বাড়তে থাকা উদ্বেগের মধ্যে বিমান নিরাপত্তা সংস্থার ব্যাখ্যা

ছবি: সংগৃহীত

গত জুনে আহমেদাবাদে ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় অন্তত ২৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে দেশজুড়ে উত্থাপিত হয়েছে এক বড় প্রশ্ন—ভারতের আকাশপথ কি এখনও নিরাপদ?

এই প্রশ্নের উত্তরে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (DGCA)-এর প্রধান ফাইজ আহমেদ কিদওয়াই বিবিসিকে বলেন, “ভারতের আকাশপথ অতীতেও নিরাপদ ছিল, এখনও নিরাপদ রয়েছে।”

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO)-এর মতো বৈশ্বিক নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি মিলিয়ন ফ্লাইটে দুর্ঘটনার হার বিবেচনায় ভারত বরাবরই গড়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। “২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মাত্র দুই বছরে আমরা বৈশ্বিক গড় হার ছাড়িয়ে গিয়েছিলাম—যে দুটি বছরেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছিল।”

ভারতে গত ১৫ বছরে তিনটি বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে:

২০২৫ সালের ১২ জুন: এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের এক মিনিটের মধ্যেই ভেঙে পড়ে, মৃত্যু হয় অন্তত ২৭০ জনের।

২০২০ সালের আগস্ট: এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট ১৩৪৪ কেরালার কোঝিকোড়ে রানওয়ে ছাড়িয়ে গিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়, ২১ জন নিহত হন।

২০১০ সালের মে: ফ্লাইট ৮১২ মাঙ্গালোরে রানওয়ে ছাড়িয়ে গিরিখাতে পড়ে, মৃত্যু হয় ১৫৮ জনের।

এছাড়া সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দিল্লি-শ্রীনগর ফ্লাইটে প্রবল টার্বুলেন্স, রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি এবং প্রশিক্ষণে ঘাটতি নিয়ে রিপোর্ট সামনে আসছে।

স্পাইসজেট-এর দুটি Q400 বিমানে প্রপেলার বেয়ারিংয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ার পর বিষয়টি ব্রিটিশ নির্মাতা ডাউটি প্রপেলারস DGCA-কে জানায়। তদন্তে উঠে আসে, বেয়ারিংয়ের অভ্যন্তরীণ অংশে ক্ষতি হওয়ার পরও সমস্যার মূল কারণ না দেখে শুধুই অতিরিক্ত গ্রীস লাগিয়ে চলছিল সংস্থাটি।

DGCA-র নিজস্ব অডিটেও আরও গাফিলতির প্রমাণ মেলে। কিদওয়াই বলেন, বিষয়টি DGCA-র নজরে আসে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। স্পাইসজেটের কয়েকজন শীর্ষ পদাধিকারীকে অপসারণ ও স্থগিত করা হয়।

এ বছরের মার্চে রয়টার্স জানায়, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস একটি A320 বিমানে প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন পার্ট পরিবর্তনে বিলম্ব করেছে এবং রেকর্ড জালিয়াতি করেছে। সংস্থাটি পরে DGCA-কে জানিয়ে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

মে মাসে ইন্ডিগোর দিল্লি-শ্রীনগর ফ্লাইটে প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সবাই নিরাপদে নামতে সক্ষম হন। এরপর DGCA নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে: এখন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নির্দিষ্ট নটিক্যাল মাইল দূর থেকে পাইলটদের এড়িয়ে চলা, ঘুরিয়ে দেওয়া অথবা অন্য বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হবে।

ভারতে বর্তমানে প্রায় ১,২৮৮টি বিমান চালু আছে এবং ৮৫০টি বিমান নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করছে। ২০১৪-১৫ সালে যেখানে যাত্রী সংখ্যা ছিল ১১.৬ কোটি, ২০২৪-২৫ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২৩.৯ কোটিতে। বাণিজ্যিক বিমানবন্দরের সংখ্যা এক দশকে বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৩০-১৪০টি।

শেষের প্রশ্ন ছিল—আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার পর কি মানুষ বিমানে চড়তে ভয় পাচ্ছে? ফাইজ কিদওয়াই বলেন, “সাময়িকভাবে কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল এবং সামান্য যাত্রীসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল। তবে তা খুবই সীমিত এবং স্বাভাবিক। সময়ের সাথে সাথে মানুষ আবার আস্থা ফিরে পায়। সময় অনেক কিছুর নিরাময় করে।”

নোভা

×