ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসরায়েল-ইরান সরাসরি সংঘাত, ছোঁড়া হলো শত শত ক্ষেপণাস্ত্র

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ১৪ জুন ২০২৫

ইসরায়েল-ইরান সরাসরি সংঘাত, ছোঁড়া হলো শত শত ক্ষেপণাস্ত্র

ছবি: সংগৃহীত।

ইসরায়েল ও ইরান সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। শনিবার (১৪ জুন) ভোরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, যার জবাবে ইসরায়েলও ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের ইতিহাসে এটিই ইরানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিমান হামলা বলে দাবি করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা রুখে দেওয়া।

তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ পুরো ইসরায়েলজুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বাজতে শুরু করে, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যায়। আকাশে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র এবং তা প্রতিহত করতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের সংঘর্ষ দেখা যায়।

ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র আবাসিক এলাকায় আঘাত হানলে এক নারী ও এক পুরুষ নিহত হন, আহত হন অন্তত ডজনখানেক মানুষ। তেল আবিবের উপকণ্ঠে রিশোন লিওন শহরের বিধ্বস্ত অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তৎপরতা চলছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, "বেসামরিক লোকদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরান নেতৃত্ব লাল দাগ অতিক্রম করেছে। এর জন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে।"

অন্যদিকে, ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিমতীরে বিস্ফোরিত হলে পাঁচ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে তিন শিশু ছিল, নিহত হয় বলে জানায় প্যালেস্টাইনি রেড ক্রিসেন্ট।

ইরানের রাজধানী তেহরানে রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানায় দেশটির আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যম তাসনিম। ফার্স বার্তা সংস্থা জানায়, দুটি ক্ষেপণাস্ত্র তেহরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দরে আঘাত হানে। এ বিমানবন্দরটি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলোর খুব কাছাকাছি এবং একটি বিমানঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ইরানের জাতিসংঘ দূত আমির সাইদ ইরাভানি জানান, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে ৭৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা আছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩২০ জনের বেশি, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

ইরান শুক্রবার রাতে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর শনিবার ভোরে তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দুগুলোতে নতুন করে হামলা চালায় বলে জানায় ফার্স। এই হামলাগুলো ছিল ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের সেনা কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো আগের দিনের হামলার প্রতিশোধ।

ইরান দাবি করেছে, তার পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবে পশ্চিমা দেশগুলো সন্দেহ করে, এটি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।

শুক্রবার ইরানের দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীও সহায়তা করেছে বলে জানান দুই মার্কিন কর্মকর্তা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, শুক্রবার ইরান ১০০-র কম ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে এবং বেশিরভাগই প্রতিহত করা হয়েছে বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে।

এই পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যদিও ইরানের দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র হামাস ও হিজবুল্লাহ ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের হামলায় দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, ইসরায়েল ইরানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করলে, এর পাল্টা হিসেবে তেহরান ইসরায়েলের দিকে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নাতানজে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে, যদিও চূড়ান্ত পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে আরও সময় লাগবে। পশ্চিমা গোয়েন্দারা মনে করেন, এই স্থাপনাটিতে বোমা তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম পরিশোধন করা হচ্ছিল।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি নিরাপত্তা পরিষদে জানান, নাতানজের উপরের অংশের পরিশোধন প্ল্যান্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলের হামলায় ফরদো এবং ইসফাহানের আরও দুটি স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলকে যুদ্ধ শুরু করার জন্য অভিযুক্ত করে বলেন, "ইসরায়েলের কোনো জায়গা আর নিরাপদ থাকবে না, প্রতিশোধ হবে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।"

ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার জন্য দায়ী করেছে এবং বলেছে, এর সম্পূর্ণ দায় ওয়াশিংটনের।

ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ড্যানি ড্যানন বলেন, গোয়েন্দা তথ্যে নিশ্চিত হয়েছে যে ইরান কয়েক দিনের মধ্যেই একাধিক বোমা তৈরির উপযোগী পারমাণবিক উপাদান উৎপাদন করে ফেলবে। তিনি বলেন, “এই অভিযান ছিল জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থে।”

ইরান বারবার বলে আসছে যে, তার পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তবে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক চুক্তির নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান এখনো চুক্তিতে ফিরে এসে সংঘর্ষ বন্ধ করতে পারে।

২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন পূর্ববর্তী পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করেছিল এবং তার পরিবর্তে একটি নতুন চুক্তির আলোচনার চেষ্টা চলছে। তবে ইরান সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। রোববার ওমানে এ নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, ইরান জানিয়েছে, অংশগ্রহণ করা নিয়ে তারা অনিশ্চিত।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এমনভাবে আচরণ করেছে যা সংলাপকে অর্থহীন করে তোলে। আপনি একদিকে সংলাপের কথা বলবেন, আবার অন্যদিকে ইসরায়েলকে আমাদের ভূমি লক্ষ্য করে হামলা চালাতে উৎসাহ দেবেন—এটা চলতে পারে না।”

সূত্র: https://short-link.me/14tSa

মিরাজ খান

×