
ভারতের আলোচিত হানিমুন হত্যাকাণ্ডে রাজা রঘুবংশীকে হত্যা নয়, আসলে সোনম রঘুবংশীকে তাঁর কাছ থেকে সরানোই ছিল আততায়ীদের উদ্দেশ্য। সেই অনুযায়ী দু’টি পরিকল্পনা আগে থেকে তৈরি করা ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। তার পরেই রাজাকে খুনের ছক কষা হয়।
গোটা পরিকল্পনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা। আটক পাঁচ জনকে প্রাথমিক ভাবে জেরার পর এমনটাই জানিয়েছে মেঘালয় পুলিশ। রাজাকে খুনের পর বোরখা পরে শিলং থেকে গুয়াহাটি গিয়েছিলেন সোনম। সেখান থেকে শিলিগুড়ি, পাটনা হয়ে ইনদওরে পৌঁছোন। পরে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের এসপি সিয়েম বিবেক বলেছেন, ‘‘রাজা এবং সোনমের বিয়ের ঠিক আগে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন রাজ কুশওয়াহা। তাঁকে সোনম সাহায্য করেছিলেন মাত্র। বাকি তিন আততায়ী রাজেরই বন্ধু, এক জন তাঁর তুতো ভাই।’’
তিনি আরও বলেছেন, ‘‘সোনমকে কী ভাবে গায়েব করা যায়, সেই পরিকল্পনা চলছিল ফেব্রুয়ারি থেকে। দু’টি ছক কষা হয়েছিল। প্রথম, সোনম নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন, এমনটা দেখানো হবে এবং পরে তাঁকে উদ্ধার করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, অন্য কাউকে খুন করে তাঁর দেহ সোনমের বলে চালিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এই দু’টি পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তার পর রাজাকে খুনের পরিকল্পনা করেন সোনমরা। বিয়ের ১১ দিন আগে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল।’’ জেরায় সোনম-সহ ধৃত পাঁচ জনই খুনের কথা এবং চক্রান্তের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বলে দাবি করেছে মেঘালয় পুলিশ।
২১ বছরের রাজের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ২৪ বছরের সোনম। কিন্তু পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। জোর করে রাজার সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। বিয়ের পর স্বামীকে সোনম বলেছিলেন, আসমের কামাখ্যা মন্দিরে গিয়ে পুজো দেওয়ার পরেই এই বিয়েকে তিনি স্বীকৃতি দেবেন। সেই অনুযায়ী নবদম্পতি প্রথমে গুয়াহাটি যান। সেখানেই রাজাকে খুনের প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে সোনম শিলঙে নিয়ে আসেন রাজাকে।
এসপি বিবেক জানিয়েছেন, তিন বন্ধুকে খুনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন রাজ। মেঘালয়ে রাজাকে খুনের পর সোনমকে বোরখা পরিয়ে একটি ট্যাক্সিতে তাঁরা পাঠিয়ে দেন গুয়াহাটিতে। সেখান থেকে বাসে করে সোনম শিলিগুড়ি আসেন। শিলিগুড়ি থেকে পটনা হয়ে বাসে যান আরা। সেখান থেকে ট্রেনে লখনউ পৌঁছোন। সেখান থেকে বাসে আবার যান ইনদওরে। তাঁরা ভেবেছিলেন, সোনমকে কেউ খুঁজে পাবেন না। ২ জুন মেঘালয়ে যখন রাজার মৃতদেহ উদ্ধার হয়, তখনও সোনম ইনদওরেই ছিলেন। কিন্তু রাজের তিন বন্ধুই ধরা পড়ে যান। রাজ ফোন করে সোনমকে জানান, উত্তরপ্রদেশে গিয়ে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং তাঁদের বলতে হবে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। তবে অপহরণের গল্প সঠিক ভাবে বলতে পারেননি সোনম। তিনি আত্মসমর্পণ করেন।
ফুয়াদ