ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যাওয়ায় আইসিসির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা?

প্রকাশিত: ১৯:০১, ২২ মে ২০২৪; আপডেট: ১৯:১৮, ২২ মে ২০২৪

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যাওয়ায় আইসিসির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, ইসরায়েলের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সেই বিষয়ে তিনি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সাথে একত্রে কাজ করবেন।

কংগ্রেসের এক শুনানিতে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘সম্পূর্ণ ভুল এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’ তার এই ঘোষণা এলো এমন সময় যখন আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য রিপাবলিকানদের চাপ বাড়ছে। খুব তাড়াতাড়ি, হয়তো এই সপ্তাহে এ বিষয়ে ভোট হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য দেশ নয়। কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সিদ্ধান্তের সময় আইসিসির কৌঁসুলীদের সমর্থন করেছে দেশটি।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২১ মে) শীর্ষ রিপাবলিকানদের একজন জেমস রিশে, সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে ব্লিঙ্কেনকে প্রশ্ন করেছেন, তিনি আইসিসির একটি দেশের স্বাধীন, বৈধ এবং গণতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও তাদের বিষয়ে নাক গলানোকে সমর্থন করবেন কি না।

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দলমত নির্বিশেষে আপনাদের সাথে কাজ করতে চাই। এটা করতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একটা সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্তের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কোনো প্রশ্নেরই অবকাশ নেই।’

আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান গত সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ারি জারির আবেদন করেছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

হামাসের তিন কর্মকর্তা গাজার নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, হামাসের কাশেম ব্রিগেড মিলিটারি উইংয়ের কমান্ডার মোহাম্মদ দাইফ এবং হামাসের পলিটিকেল ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছেন করিম খান।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করাটা আপত্তিকর। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কোনো সমতা নেই।’

ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে এই আদালতের তদন্তের পরিধি বাড়ায় কংগ্রেসে আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অন্তত দুইটা কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মাসের শুরুতে টেক্সাসের রিপাবলিকান চিপ রায়ের উত্থাপন করা একটি বিলের সমর্থনে ক্যাপিটাল হিলে এর সমর্থন বাড়তে শুরু করে। সেই বিলে বলা হয়েছে, আইসিসির যেসব কর্মকর্তা এই মামলার সাথে জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে তাদের যে কোনো ভিসা প্রত্যাহার এবং দেশের ভেতরে তাদের যে কোন সম্পত্তি লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এটা অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সুরক্ষিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না করে।

রিপাবলিকান হাউসের অন্তত ৩৭ জন আইন প্রণেতা এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। এদের মধ্যে রিপাবলিকান চেম্বারের তৃতীয় সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্কিংয়ের এলিস স্টেফানিকও রয়েছেন। স্টেফানিক নতুন করে ইসরায়েল সফর করেছেন। সেখানে নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, নেসেটে বক্তব্য দিয়েছেন এবং গাজায় বন্দিদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘গণহত্যাকারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠির বিরুদ্ধে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় এই আদালত একটি শান্তিপূর্ণ জাতিকে তিরষ্কার করেছে।’

এই বিলটি সমর্থনকারী আরেকজন রিপাবলিকান কেন্টাকির অ্যান্ডি বার বলেছেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির এই মামলাটি আরও বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে, এটাকে নিষেধাজ্ঞা দিতে পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে হবে।’ যদিও ডেমোক্রেটিক আইন প্রণেতারা এই প্রচেষ্টার পেছনে থাকবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।

গত কয়েক মাস ধরেই বাইডেনের ইসরায়েল পলিসির সাথে দলটির মডারেট এবং উদারপন্থি উইং বেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। কারণ তরুণ উদারপন্থি ভোটাররা নেতানিয়াহুর সরকারের গাজায় অভিযানের আরও কঠোর সমালোচনা করতে প্রেসিডেন্টকে চাপ প্রয়োগ করেছে। বাইডেনের গত সপ্তাহে ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্তের পক্ষে খুব কম ডেমোক্রেট ভোট দিয়েছেন তাদের একজন ওহাইওর গ্রেগ ল্যান্ডসম্যান। তিনি জানান, আইসিসিকে একটি যথাসম্ভব শক্ত বার্তা দেয়ার লক্ষ্যে’ কংগ্রেস দলমত নির্বিশেষে তিরষ্কার করবে বলে আশা করেন তিনি। এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সিদ্ধান্ত উত্তেজনা ও বিভাজন আরও বাড়িয়ে দেবে এবং ইসরায়েল বিরোধী ষড়যন্ত্র আরো বাড়িয়ে তুলবে এবং সর্বোপরি এটা আইসিসির বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

নেতানিয়াহুকে কংগ্রেসের এক বৈঠকে আমন্ত্রণ জানাতে মঙ্গলবার রিপাবলিকান হাউস স্পিকার মাইক জনসন সিনেটের শীর্ষ ডেমোক্রেটদের একজন চাক শুমারকে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করতে আহ্বান জানিয়েছেন। মার্চে শুমার ইসরায়েলে নতুন নির্বাচনের আহ্বান করেছিলেন কিন্তু সোমবার তিনি আইসিসির মামলাকে নিন্দনীয় বলেছেন। সিনেটর ক্রিস কুনস, ডেলাওয়্যারের একজন ডেমোক্রেট এবং সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কি না সে বিষয়ে সাবধানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মিনেসোটার কংগ্রেসওমেন ইলহান ওমর বলেছেন, আইসিসির অভিযোগগুলো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এর কাজকে সমর্থন করা উচিত যেমনটা অতীতে লিবিয়ার মামলার সময় করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানার এই আবেদন নিছকই একটা বিচারিক প্রক্রিয়ার সূচনা। আইসিসি একটা কার্যকরী আদালত, যেখানে দোষী সাব্যস্ত, খালাস এবং বরখাস্ত করা হয়। যেমনটা আমরা একটা নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক বিচার বিভাগ থেকে আশা করি।’

রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন হাউস বা ডেমোক্রেটিক নিয়ন্ত্রিত সিনেটের কেউ এখনও এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জন্য কোনও প্রচেষ্টা করেছে কি না তা এখনও অস্পষ্ট। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেরিন জ্যঁ পিয়ারি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তারা আইন প্রণেতাদের সাথে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।’

রাশিয়ার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্রতিপক্ষের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা অনেক বেশি কৌতুহলোদ্দীপক।’ 

সূত্র: বিবিসি।

 

এম হাসান

×