ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

গাজায় হাজার রিজার্ভ সেনা পাঠাচ্ছে ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ৫ মে ২০২৫

গাজায় হাজার রিজার্ভ সেনা পাঠাচ্ছে ইসরায়েল

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, তারা চাপ বাড়াচ্ছে যাতে গাজায় জিম্মি রাখা ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনা যায় এবং হামাস যোদ্ধাদের পরাজিত করা যায়।

সমালোচকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানযা একটি যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার শুরু হয়েছে। তা জিম্মিদের মুক্তির কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেনাবাহিনী জানিয়েছে তারা নতুন এলাকায় অভিযান চালাবে এবং মাটির ওপর ও নিচের সব ধরণের "অবকাঠামো ধ্বংস" করবে।

রবিবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এই সামরিক সম্প্রসারণ অনুমোদনের জন্য বৈঠক করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় এখনো যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জন জিম্মির মুক্তির বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি এদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত ১৮ মার্চ হামাসের সঙ্গে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করার পর থেকে কোনো ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করা হয়নি। এরপর থেকে ইসরায়েল গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করেছে, আবারও লক্ষ লক্ষ গাজাবাসীকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

ইসরায়েল বলেছে, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এই কৌশলের অংশ হিসেবে দুই মাসের বেশি সময় ধরে মানবিক সহায়তায় অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। তীব্র খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকটের কথা জানানো বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা এই নীতিকে "ক্ষুধার মাধ্যমে শাস্তি" হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যদিও ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এই সম্প্রসারিত হামলা ক্লান্ত রিজার্ভ সেনাদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। অনেককে যুদ্ধ শুরুর পর পাঁচ বা ছয়বার ডাকা হয়েছে। এতে জিম্মি পরিবারের উদ্বেগও বাড়বে, যারা সরকারের প্রতি হামাসের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছে, জীবিতদের বাঁচানোর একমাত্র উপায় সেটাই। এই পদক্ষেপ নেতানিয়াহুর গাজা বিষয়ে প্রকৃত অভিপ্রায় নিয়েও নতুন প্রশ্ন তুলবে।

জিম্মিদের পরিবার ও বিরোধীরা প্রায়শই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চুক্তি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার এবং রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ তুলেছেন, যা তিনি অস্বীকার করেছেন।

যুদ্ধ শুরুর প্রায় ১৯ মাস পরও তিনি যুদ্ধ-পরবর্তী কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করেননি। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, শুক্রবার সেনাবাহিনী নেতানিয়াহুকে গাজায় ধাপে ধাপে চালানো নতুন অভিযানের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হাজার হাজার ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনা এক খোলা চিঠিতে নেতানিয়াহুর সরকারকে যুদ্ধ বন্ধ করে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য চুক্তিতে মনোযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলজুড়ে আবারও যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। তেল আবিবে এক জিম্মির মা যিনি এখনো বন্দি, এই যুদ্ধকে "অপ্রয়োজনীয়" বলে উল্লেখ করেছেন।

রবিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, গাজায় আরও দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। এর আগে রবিবার ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের মূল টার্মিনালের কাছে পড়ে, কর্তৃপক্ষ জানায়। গাজায়, হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জন নিহত এবং ১২৫ জন আহত হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক নজিরবিহীন সীমান্ত অতিক্রমকারী হামলার জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাস ধ্বংসের লক্ষ্যে অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

গাজায় চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫২,৫৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর মধ্যে ২,৪৩৬ জন নিহত হয়েছেন ১৮ মার্চের পর, যখন ইসরায়েল গাজায় আবার অভিযান শুরু করে।
 

শহীদ

×