ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

এবার ‘নরকোকোরিদো’ গানের শিল্পীদের টার্গেট ট্রাম্প প্রশাসনের

প্রকাশিত: ০২:৩১, ৫ মে ২০২৫; আপডেট: ০২:৩২, ৫ মে ২০২৫

এবার ‘নরকোকোরিদো’ গানের শিল্পীদের টার্গেট ট্রাম্প প্রশাসনের

ছবি: সংগৃহীত

মাদকচক্র নিয়ে গান গাওয়া মেক্সিকান সংগীতশিল্পীদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সম্প্রতি জনপ্রিয় মেক্সিকান ব্যান্ড ‘লস আলেগ্রেস দেল বারাঙ্কো’র ভিসা বাতিল করেছে, কারণ তারা ‘একজন মাদকসম্রাটকে গৌরবান্বিত’ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

বিতর্কিত সেই গান ‘এল দেল পলেনকে’—যার কথা জালিস্কো নিউ জেনারেশন কার্টেলের নেতা ‘এল মেনচো’র কৃতকর্ম বর্ণনা করে—সম্প্রতি মেক্সিকোর জাপোপান শহরের এক কনসার্টে পরিবেশন করে ব্যান্ডটি। মঞ্চের পেছনে মেনচোর কার্টুনচিত্রও প্রদর্শিত হয়। এরই পরিণতিতে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ট্যুর বাতিল হয় এবং মেক্সিকোতেও শুরু হয় আইনি তদন্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, আমরা এমন লোকদের স্বাগত জানাতে পারি না যারা অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের প্রশংসা করে। ট্রাম্প প্রশাসনে আমরা আমাদের সীমান্তে কারা আসছে তা খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি।

অন্যদিকে, ব্যান্ডটি ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে জানায়, তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করছে।

মেক্সিকোতে ‘নরকোকোরিদো’ নামে পরিচিত এই সংগীতধারা মূলত মাদকজগতের ঘটনা নিয়ে রচিত গান। ঐতিহ্যবাহী কোরিদোর আধুনিক রূপ এটি। ১৯ শতকের লোকগান থেকে উৎপত্তি হলেও সময়ের সাথে সাথে এতে মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের ‘বীরত্বগাথা’ স্থান পায়। বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৮০-এর দশকে কিংবদন্তি শিল্পী চালিনো সানচেজ যখন মাদকব্যবসায়ীদের অর্থে গান লিখতে শুরু করেন, তখনই এই ঘরানায় এক আমূল পরিবর্তন আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ শ্রোতাদের মধ্যে এই ঘরানার জনপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। ২০২৩ সালে ইউটিউবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি শোনা শিল্পী ছিলেন ‘নরকোকোরিদো’ গায়ক পেসো প্লুমা। অর্থাৎ বিতর্কের পরেও এ ধরনের গানের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে।

তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, এখনকার অনেক শিল্পীই নিরাপত্তার আশঙ্কায় বা ভিসা হারানোর ভয়ে নিজেদের গানের বিষয়বস্তু বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। সংগীত বিশ্লেষক ও লেখক এলিয়াহ ওয়াল্ড বলেন, এটা নিছক ভিসা বাতিলের বিষয় নয়, এটা একধরনের রাজনৈতিক বার্তা। গান গেয়ে কেউ মার্কিন অভিবাসন নীতির শিকার হচ্ছে, এটা অশনি সঙ্কেত।

মেক্সিকোর নতুন প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাম যদিও দেশব্যাপী এ ধরনের গানে নিষেধাজ্ঞার পক্ষপাতী নন, বরং শান্তি ও প্রেমের গানকে উৎসাহিত করতে চান, কিন্তু অনেকেই এটিকে অবাস্তব কৌশল বলে মনে করছেন।

আটলান্টার সাম্প্রতিক এক কনসার্টে অংশ নেওয়া এক দর্শক বলেন, করিদো গানগুলো আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের অস্তিত্ব। এগুলো নিষিদ্ধ করলেই কি আমরা শুনব না? নিশ্চয়ই শুনব।

সংগীতকে ঘিরে এমন নিষেধাজ্ঞা ও বিতর্ক, শিল্প ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন তোলে। শেষ পর্যন্ত এই ঘরানার সংগীত কি বেঁচে থাকবে নাকি রাজনীতির যাঁতাকলে পিষ্ট হবে—তা সময়ই বলবে।

 

এসএফ

তথ্যসূত্র: সিএনএন

×