ইউরোপ সন্ত্রাসীদের জন্য এক স্বাগত চিহ্ন হিসেবে কাজ করছে বলে ব্রিটেনের সাবেক টোরি নেতা লর্ড হাওয়ার্ড সতর্ক করে দিয়েছেন। এদিকে, বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী হামলার পর ইউরোপের উন্মুক্ত সীমান্ত নীতি (শেনজেন চুক্তি) বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখা দিলে, ইউরোপের মূলধারার নেতারা ঐ নীতির সমর্থনে এককাট্টা হন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ব্রাসেলসের সন্ত্রাসী হামলাকে এ মুহূর্তে ইউরোপের উন্মুক্ত সীমান্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেখানো ঠিক হবে না। এর বদলে ব্রিটেনের বেলজিয়ামের প্রতি সহানুভূতি দেখানো উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে লন্ডনের গবেষণা সংস্থা পলিটেইয়াতে মঙ্গলবার রাতে দেয়া এক ভাষণে লর্ড হাওয়ার্ড বলেন, বর্তমান আকারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক ত্রুটিপূর্ণ ও ব্যর্থ সংস্থা। এটি এর অধিবাসীদের অনেককেই আরও নিঃস্ব করে তুলছে এবং এর জনগণকে নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার ভাষণটি বেলজিয়াম হামলার আগেই লেখা হয়েছিল। তিনি বলেন, ঐ নিঃস্বতা হলো ইউরোর পরিণতি। কারণ এর বিনিময়হার এতই বেশি যে, দক্ষিণ ইউরোপের পঙ্গু অর্থনীতির দেশগুলো এর সঙ্গে পেরে উঠছে না। জননিরাপত্তার অভাব হলো শেনজেন চুক্তির পরিণতি। এটি ইন্টারপোলের সাবেক প্রধানের মতে, সন্ত্রাসীদের ইউরোপে স্বাগত জানানোর এক চিহ্নের মতো ঝুলে রয়েছে।
ইইউ নিয়ে সন্দিহান এমন এক ব্রিটিশ মন্ত্রী জর্জ ইউস্টিস টেলিগ্রাফকে বলেন, শেনজেন জোন সন্ত্রাসীদের অবাধে চলাচল করার সুযোগ করে দিয়েছে। ইইউ ছেড়ে দিলেই কেবল ব্রিটেন এর সীমান্তের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারে।
ক্যামেরনসহ ইউরোপীয় নেতারা ইইউ সন্দেহবাদীদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন যে, শেনজেন চুক্তি ইউরোপকে সন্ত্রাসীদের দয়ার কাছে ছেড়ে দিয়েছে বলে ব্রাসেলস হামলায় প্রমাণিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালের এ হামলায় ৩৫ ব্যক্তি নিহত হয়।
ঐ ভয়াবহ হামলার নিন্দা করে ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির (ইউকিপ) এক বিবৃতিকে ‘যথার্থ নয়’ বলে ক্যামেরন মন্তব্য করেন। এতে ইউকিপ যুক্তি দেখায় যে, শেনজেনের অনুমোদিত চলাচলের স্বাধীনতা ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা ব্রিটেনের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি। দলটি খোলা সীমান্ত ইউরোপীয় নাগরিকদের জীবনের প্রতি ঝুঁকির সৃষ্টি করছে বলেও মন্তব্য করে। এটি এ প্রসঙ্গে ইউরোপে একেবারে ৫,০০০ জিহাদী অবস্থান করে থাকতে পারে বলে ইউরোপের ব্রিটিশ প্রধান রব ওয়েনরাইনের গত মাসের এক উক্তির উদ্ধৃতি দেয়।
ইউরোপের অন্য ডানপন্থী মুখপাত্ররাও ঐ অনুভূতির প্রতিধ্বনি করেন। তারা বছর ধরে চলমান শরণার্থী সঙ্কট এবং উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার মুখে ইউরোপের সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করতে মহাদেশের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টির অন্যতম সিনেটর ডেভিড র্যাশলিন ইউকিপের সুরেরই প্রতিধ্বনি করেন। তিনি প্রশ্ন করেন, ইউরোপ অভিবাসন বন্ধ করা এবং শেনজেন চুক্তির অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ও জরুরী ব্যবস্থা নেয়ায় আগে মহাদেশে কতগুলো সন্ত্রাসী হামলা অবশ্যই ঘটতে হবে। ইউরোপীয় কমিশনের ইস্যু করা এক বিবৃতিতে ইইউ বলেছে, চলাচলের স্বাধীনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছেড়ে দেয়ার অভিপ্রায় ইইউর নেই। বিবৃতিটি ক্যামেরনসহ ইইউর ২৮টি দেশের সরগুলোর সরকার প্রধানরাই সরকারীভাবে অনুমোদন করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ সর্বশেষ হামলা অসহিষ্ণুদের হামলা থেকে ইউরোপীয় মূল্যবোধ ও সহিষ্ণুতাকে রক্ষা করতে আমাদের সঙ্কল্পকেই কেবল শক্তিশালী করবে। আমরা ঘৃণা, সহিংস উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়মনা হবো। অভিবাসী সঙ্কট ও দুটি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার মতো হুমকির মুখে পড়ে শেনজেন চুক্তিকে গত বছর ধরে কয়েকবারই সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। এতে চুক্তিটির দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের সর্বশেষ ঘটনায় বেলজীয় প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল তার দেশের সীমান্তে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ঘোষণা করবেন। জার্মানি জানায়, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস সংলগ্ন জার্মান সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে। -টেলিগ্রাফ