
ছবি: সংগৃহীত
চোখের পলকে ধুলোর সঙ্গে মিশে গেলো ঘরবাড়ি। গেল সোমবার গাজার খান ইউনিসে সতর্কবার্তা জারির পরপরই ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরাইল। মুহূর্তেই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ধোঁয়া কেটে গেলে দেখা যায় বিশাল এক গর্ত— যেখানে মুহূর্ত আগেও ছিলো মানুষের বসতি।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজায় নতুন অভিযান পরিচালনার ফুটেজ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায়, উপত্যকার আকাশে উড়ে যাচ্ছে হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান। দিনদুপুরে আবাসিক এলাকায় চালানো হচ্ছে নির্বিচার বোমা হামলা। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রাণ হারিয়েছেন বহু নিরীহ ফিলিস্তিনি।
ইসরাইলের এই বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে সোমবার যৌথ বিবৃতি দিয়েছে তিনটি শক্তিধর দেশ—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ না হলে ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এছাড়াও আরও ২২টি দেশ ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে গাজায় পূর্ণাঙ্গ ত্রাণ সরবরাহ চালু করার জন্য। তবে এই আন্তর্জাতিক চাপকে একপ্রকার তাচ্ছিল্যই করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, গাজায় সব ধরনের সামরিক অভিযান চলবে এবং কোনো চাপের কাছে তারা নতি স্বীকার করবে না।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সোমবার ত্রাণবাহী ৫০টি ট্রাক অনুমতির আবেদন করলেও ইসরাইল মাত্র ৯টিকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক একে তুলনা করেছেন "সমুদ্রের মাঝে একফোঁটা পানির" সঙ্গে। গাজাবাসীর বিপুল চাহিদার তুলনায় এটি খুবই নগণ্য।
তবে ইসরাইল বলছে, এর জন্য দায়ী হামাস। নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, অতিরিক্ত ত্রাণ ট্রাক পাঠানো হলে তা হামাসের দখলে চলে যেতে পারে। সেই ঝুঁকি এড়াতে প্রাথমিকভাবে ত্রাণ সহায়তা বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে তারা নতুন কৌশলে ত্রাণ বিতরণ করছে, যেখানে রুট এবং বিতরণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে আইডিএফ।
এদিকে একের পর এক হামলায় খান ইউনিসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এলাকাটিকে কার্যত যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণা করে চলছে তাণ্ডব। ফলে ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন শত শত বাস্তুহারা ফিলিস্তিনি। দুপুরের গরম রোদে কেউ সাইকেলে, কেউ বা নিজের কাঁধে শিশু ও আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। হাতে করে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের সামান্য যা কিছু অবশিষ্ট আছে।
নিজ ঘর হারানোর বেদনা, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা এবং বুকভরা ক্ষোভ নিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। গাজার মাটিতে যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে হিরোশিমার বিভীষিকা। বিশ্ব তাকিয়ে আছে, আরেকটি মানবিক বিপর্যয়ের হাতছানি নিয়ে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=oHtHzU23OGw
এম.কে.