
ছবি: সংগৃহীত
এক সময় ইরানের পরমাণু চুক্তির বিরোধিতায় সরব হয়ে বিশ্বমঞ্চ কাঁপিয়েছিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, এই চুক্তি ইসরাইলের জন্য আত্মঘাতী। এমনকি মার্কিন কংগ্রেসের মঞ্চ থেকেও তিনি ওবামার কড়া সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর চোখে ইরান ছিল অস্তিত্বের হুমকি, আর তাই বারবার যুদ্ধই তুলে ধরেছেন সমাধান হিসেবে।
কিন্তু সময় বদলেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন আবার ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির আলোচনা শুরু করেছে। আর সেই নেতানিয়াহু, যিনি একসময় একাই ইরানকে থামাতে চেয়েছিলেন, এখন যেন চুপচাপ, নীরব। কারণ হোয়াইট হাউসে বসা নতুন ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প। নেতানিয়াহু বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প ইসরাইলের সবচেয়ে বড় মিত্র। তাকে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা মানে নিজের অবস্থান দুর্বল করা। বিশেষ করে ট্রাম্পের কড়া মেজাজ ও সমালোচনায় অসহিষ্ণুতা নেতানিয়াহুকে আরও সতর্ক করে তুলেছে।
ইসরায়েলি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আইএনএসএস-এর ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইউয়েল গুজানসকির ভাষায়, নেতানিয়াহু এখন এক ধরনের “পক্ষাঘাতগ্রস্ত” অবস্থায় আছেন। গত ১৮ মাসে ইসরায়েল ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে লেবানন, সিরিয়া, গাজা এমনকি ইরানের অভ্যন্তরেও আঘাত করেছে। এই অবস্থায় ইরানের পরমাণু স্থাপনায় চূড়ান্ত হামলার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সমস্যার মূল জট যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের পক্ষে এককভাবে বড় ধরনের সামরিক অভিযানে যাওয়া কঠিন, আর ওয়াশিংটন এখন ইরানের সঙ্গে আলোচনা চায়।
মার্কিং-ইসরাইল সম্পর্ক বিশ্লেষক এওতান গিলবোয়া জানান, নেতানিয়াহুর আশা ছিল ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে এলে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আবার শক্ত অবস্থান নেবে। কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প চুক্তির মাধ্যমে ইরানকে পরমাণু বোমার পথ থেকে ফেরাতে চান। এতে নেতানিয়াহুর আগের সমস্ত কৌশল যেন ব্যর্থ হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে ২০২০ সালে জো বাইডেনকে নির্বাচন জয়ী হিসেবে অভিনন্দন জানানোর পর থেকে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা আসে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবার নেতানিয়াহু মুখ খুলছেন ভেবেচিন্তে। কারণ তিনি জানেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির আলোচনায় থাকলে ইসরায়েলের পাশে থাকবে না। তাই যদি ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায়, করতে হবে একাই।
নেতানিয়াহু অবশ্য জানিয়েছেন, যদি চুক্তি হয়, তাহলে সেটা হতে হবে "লিবিয়া মডেল"-এর মতো। অর্থাৎ, ইরানকে সম্পূর্ণভাবে তার পরমাণু অবকাঠামো ধ্বংস করতে হবে, ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরির সক্ষমতা বন্ধ করতে হবে, এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের জন্য পরমাণু স্থাপনাগুলো উন্মুক্ত করতে হবে। কিন্তু ইরান এমন কোনো চুক্তিতে রাজি নয়, তারা দাবি করছে তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
এই অবস্থায় ট্রাম্পও বলছেন, কূটনৈতিক সমাধানই অগ্রাধিকার, তবে শর্ত না মানলে সামরিক হামলা বিকল্প হিসেবে থাকবে। বিশ্লেষকদের মতে, যদি চুক্তি হয়, নেতানিয়াহু সরাসরি বিরোধিতা করবেন না, বরং তাঁর ডানপন্থী মিত্রদের দিয়ে বিরোধিতা করিয়ে নিজে আড়ালে থাকবেন।
সবমিলিয়ে নেতানিয়াহুর একমাত্র আশা এখন, আলোচনা ভেস্তে যাক। চুক্তি না হলেই তাঁর রাজনৈতিক জয়। কিন্তু তা যদি না হয়? তাহলে কি ইসরাইল একাই যুদ্ধে নামবে? নাকি ইরান সত্যিই পাবে সেই পরমাণু অস্ত্র, যার হুমকি নিয়ে গত এক দশক ধরে বিশ্বকে সতর্ক করে এসেছেন নেতানিয়াহু? উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=GfkkXt5UxuU
এম.কে.