
ছবি: প্রতিকী
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্ভবত আমাদের জীবদ্দশায় দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী রূপান্তরমূলক প্রযুক্তি। তবে এত আলোচনার মধ্যেও, প্রশ্ন থেকে যায়—কীভাবে এই প্রযুক্তিকে বাস্তব জীবনের ব্যবসায়িক কাজে লাগানো যায়? প্রতিনিয়ত নতুন মডেল ও অগ্রগতি সামনে আসছে, ফলে অনেকের কাছেই বিষয়টি জটিল মনে হতে পারে। আর বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ মানুষ GPT-4.5 আর Claude 3.7 Sonnet-এর পার্থক্যও জানেন না—তাদের জন্য জানাটাও খুব জরুরি নয়।
মূল বিষয় হলো, ব্যবসায়িক নেতাদেরকে এই প্রযুক্তির জটিল পরিভাষা ও ধ্বনির বাইরে গিয়ে এর ব্যবহারিক দিকগুলো অনুধাবন করা। কারণ, ম্যাকিন্সির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিমধ্যে ৭৮% প্রতিষ্ঠান অন্তত একটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করছে।
আমার কোম্পানি, পোর্টপ্রো টেকনোলজিস, যেহেতু একটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান—এআই গ্রহণ করাটা খুব একটা অবাক করার মতো নয়। কিন্তু আসল চমক এসেছে তখন, যখন আমাদের গ্রাহকরা, যারা মূলত ট্রাকিং খাতের সঙ্গে জড়িত, তারাও এআই ব্যবহার করে প্রকৃত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে শুরু করল।
এরা মূলত সমুদ্রবন্দর ও রেলইয়ার্ড থেকে পণ্য পরিবহন করে—যাকে বলা হয় “ড্রেয়েজ” শিল্প। এটি একটি পুরনো ধাঁচের খাত, যেখানে এখনো প্রচুর ফোনকল, ইমেইল ও স্প্রেডশিটের ওপর নির্ভর করা হয়।
তাই যদি এমন এক প্রথাগত শিল্প এআই গ্রহণ করতে পারে, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই পারবেন। কেবল কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই এআইকে আপনার ব্যবসার উপযোগী করে তোলা সম্ভব।
যেভাবে ট্রাকিং কোম্পানিগুলো এআই ব্যবহার করছে
আপনার ইনবক্স কি প্রায়ই বার্তা ভরতি হয়ে যায়? এখন ভাবুন, আপনি একটি ট্রাকিং ব্যবসার মালিক, আর প্রতিদিন শত শত ইমেইল আসছে—কখন পণ্য যাবে, কোথায় যাবে, রেট নিয়ে দর কষাকষি, স্ট্যাটাস আপডেট ইত্যাদি। এসব ম্যানুয়ালি পরিচালনা করা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। তাই অনেক কোম্পানি এআই টুল ব্যবহার করছে, যা জিমেইল বা আউটলুকের সঙ্গে ইন্টিগ্রেট হয়ে ইনবক্স ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো—পরিকল্পনা, রুটিং ও ডিপাচিং। কোন পণ্য কবে যাবে, কোন ড্রাইভার যাবে, আবহাওয়া, যানজট বা যন্ত্রপাতি নষ্টের ঝুঁকি বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জটিল কাজ। এই কাজগুলো আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নিত। কিন্তু এখন অনেক প্রতিষ্ঠান এআই দিয়ে মিনিটের মধ্যেই কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করতে পারছে।
এগুলো কোনো ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়—স্বয়ংচালিত ট্রাকের মতো দূরের বিষয় না। বরং এই ব্যবহারগুলো বাস্তবে ইতিমধ্যেই ঘটছে, আর সুফলও মিলছে।
তিনটি উপায়ে আপনি এআইকে কাজে লাগাতে পারেন
এআই একটি বহুমুখী টুল—তাই এটি প্রায় সব ধরনের ব্যবসার জন্য উপযোগী হতে পারে। নিচে তিনটি সহজ ধাপ তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে এআই ব্যবহার শুরু করতে সাহায্য করতে পারে:
১. প্রথমে ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথা বলুন
যারা প্রতিদিন কাজ করেন, তারাই জানেন কোথায় অসুবিধা হচ্ছে। কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে জানা যায়—কোন প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে সময় নিচ্ছে, কোথায় ভুল বেশি হচ্ছে। আমার প্রতিষ্ঠান যেসব এআই টুল তৈরি করেছে, তার বেশিরভাগই গ্রাহকদের কাছ থেকে এসব তথ্য জেনে তৈরি করা হয়েছে।
২. পরিষ্কারভাবে মেট্রিকস নির্ধারণ করুন
এআই দিয়ে সময় বাঁচাতে চাইলে, আগে পরিমাপ করতে হবে—সেই কাজটি আগে করতে কত সময় লাগত, আর এখন কত সময় লাগছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ড্রেয়েজ কোম্পানি যদি হিসাব করে, এআই ব্যবহারে বছরে কয় ঘণ্টা সাশ্রয় হলো, তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারবে প্রযুক্তিটি কার্যকর হয়েছে কিনা।
৩. এআই কীভাবে কাজ বদলায়, তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করুন
এখনো অনেকেই মনে করেন, এআই মানুষের কাজ কেড়ে নেবে। যদিও এই ধারণা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে, তবুও পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ বলছে—৩২% কর্মী এখনো মনে করেন, এআই তাদের চাকরি হুমকির মুখে ফেলবে।
কিন্তু বাস্তবে, এআই অনেক সময় আমাদের বিরক্তিকর ও পুনরাবৃত্ত কাজ থেকে মুক্ত করে, ফলে আমরা আরও সৃজনশীল কাজে সময় দিতে পারি। কর্মীরা যখন বুঝতে পারেন, এআই সহযোগী—not প্রতিদ্বন্দ্বী—তখন তারা নতুন প্রযুক্তিকে আপন করে নেয়। অনেক সময় তারা নিজেরাই প্রশ্ন করে বসে “আগেই কেন শুরু করা হলো না?”
সূত্র: https://www.forbes.com/councils/forbesbusinesscouncil/2025/05/01/making-ai-work-for-you-lessons-learned-from-the-trucking-industry/
রবিউল