ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

একাকীত্ব মোকাবেলায় এআই! বন্ধু গড়ার পথে মেটা

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৩:৩৪, ৪ মে ২০২৫

একাকীত্ব মোকাবেলায় এআই! বন্ধু গড়ার পথে মেটা

ছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীল জগতে এখন কেবল কাজের দক্ষতা নয়, বরং মানুষের একাকিত্ব দূর করার সম্ভাব্য সমাধান হিসেবেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-কে কাজে লাগাতে চাইছে মেটা ও মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা।

সম্প্রতি মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ ও মাইক্রোসফটের এআই নেতারা এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন যেখানে কৃত্রিম বন্ধু (এআই কোম্পানিস) তৈরি করে একাকিত্বের মহামারি বা মোকাবিলার চেষ্টা করা হবে।

মার্ক জাকারবার্গের এ মন্তব্য আসে মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সাম্প্রতিক এক ভবিষ্যদ্বাণীর প্রেক্ষিতে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে বেশিরভাগ কাজেই মানুষের বিকল্প হয়ে যাবে। মানুষের জন্য কেবল তিনটি পেশাটিকে থাকবে-জীববিজ্ঞানী, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কোডাররা।

এক ইউটিউব সাক্ষাৎকারে পডকাস্টার দ্বারকেশ প্যাটেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় জাকারবার্গ বলেন, মেটার বৃহৎ এআই পরিকল্পনার একটি অংশ হলো এমন চ্যাটবট তৈরি করা, যা সামাজিক সঙ্গী হিসেবে কাজ করতে পারবে।

তিনি বলেন, “গড়ে একজন আমেরিকানের তিনজনেরও কম ঘনিষ্ঠ বন্ধু রয়েছে, অথচ মানুষ চায় অন্তত ১৫টি অর্থবহ সম্পর্ক।” আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা ও ডিজিটাল বিচ্ছিন্নতা এই সংযোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

মেটা এর লামা মডেলের মতো উন্নত জেনারেটিভ এআই ভবিষ্যতে এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে যেখানে তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যবহারকারীর সঙ্গে কথোপকথন করতে পারবে।
এই এআই বন্ধুরা আবেগগত সমর্থন দিতে পারে, কথোপকথনের সঙ্গী হতে পারে, এমনকি থেরাপিস্ট বা রোমান্টিক সঙ্গীর ভূমিকাও নিতে পারে বলে জানান জাকারবার্গ। তবে তিনি স্বীকার করেন, প্রযুক্তিটি এখনও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে এবং এতে আবেগ বোঝার সক্ষমতা ও প্রসঙ্গভিত্তিক বোঝাপড়ার ঘাটতি রয়েছে।

জাকারবার্গ মনে করেন, এআই সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সমাজে এক ধরনের সামাজিক ট্যাবু রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই সমাজ এমন একটি ভাষা খুঁজে পাক, যার মাধ্যমে এই বিষয়ের মূল্য ও যৌক্তিকতা বোঝানো সম্ভব হয়।”

২০২৩ সালে আমেরিকান সোসিওলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের ৩০% এর তিনজন বা তার কম ঘনিষ্ঠ বন্ধু রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি, রিমোট ওয়ার্ক ও ডিজিটাল যোগাযোগের আধিক্য একাকিত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল বিবেক মার্থি একাকিত্বকে ‘জনস্বাস্থ্য সংকট’ ঘোষণা করেন, কারণ এটি বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

এআই বন্ধুর মাধ্যমে মানসিক সঙ্গ পাওয়া স্কেলযোগ্য ও সহজলভ্য হতে পারে। রেপ্লিকা-এর মতো অ্যাপ, যা এআই সঙ্গী হিসেবে কাজ করে, ইতিমধ্যে লাখ লাখ ব্যবহারকারী অর্জন করেছে-অনেকেই দাবি করেছেন, তারা তাদের ভার্চুয়াল বন্ধুর সঙ্গে আবেগগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।

তবে প্রযুক্তিগতভাবে এআই-কে মানবিক আবেগ অনুকরণে সক্ষম করে তোলা বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। লামা এর মতো বর্তমান এআই মডেলগুলো মূলত কাজকেন্দ্রিক; আবেগগত জটিলতা ও গভীরতা এখনো তাদের সীমিত।
এআই সঙ্গীর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মানুষের বাস্তব সম্পর্ক দূরে ঠেলে দিতে পারে-এমন আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবহারকারীদের আবেগ কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো অর্থ উপার্জনের পথ তৈরি করতে পারে, যেমন ইন-অ্যাপ পারচেজ বা ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ। এছাড়া এআই বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনের সময় ব্যক্তিগত সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার হওয়ায় গোপনীয়তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

মার্ক জাকারবার্গের এআই বন্ধু পরিকল্পনা প্রযুক্তি ও মানবিক সম্পর্কের সংযোগে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে। তবে এটি সফল ও নিরাপদ করতে প্রয়োজন আরও উন্নত প্রযুক্তি, সামাজিক স্বীকৃতি এবং নৈতিক নীতিমালা।

 

সূত্র: https://shorturl.at/3IfYT

মিরাজ খান

×