
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তার মতে, বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজারে শিগগিরই এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে এআই। বিশেষত, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশাগুলোতে এর প্রভাব পড়বে ব্যাপকভাবে।
গেটসের মতে, আধুনিক এআই প্রযুক্তি এখন এমন কাজও করতে সক্ষম, যা আগে কেবল মানুষের একচ্ছত্র অধিকার ছিল। যেমন— রোগ নির্ণয়, রোগীর ইতিহাস বিশ্লেষণ বা শিক্ষার্থীর দুর্বলতা অনুযায়ী পাঠদান। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাশ্রয়ী ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা বিস্তারের নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে।
তবে এই পরিবর্তন নিয়ে উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—একজন মানবিক চিকিৎসকের সহানুভূতি বা একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের সংবেদনশীলতা কি কখনো একটি যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন সম্ভব? প্রযুক্তির এই অগ্রগতি যদি মানবিক স্পর্শকে ছাপিয়ে যায়, তবে তার সামাজিক প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হবে?
তবে সব পেশাই সমান হারে ঝুঁকিতে নেই। বিল গেটস এমন কয়েকটি পেশার কথাও উল্লেখ করেছেন, যেখানে এখনো মানুষের উপস্থিতি অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে—জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, জীববিজ্ঞানী এবং সফটওয়্যার ডেভেলপারদের মতো পেশা। এসব ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা, বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সীমার বাইরে।
উদাহরণস্বরূপ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো জটিল বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করেন। জীববিজ্ঞানীরা প্রকৃতির জটিলতা বিশ্লেষণ করে নতুন আবিষ্কারের পথ খোলেন। আর সফটওয়্যার ডেভেলপাররাই তো সেই প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যার ভিতরে এআই বসে আছে!
গেটস আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা তুলে ধরেছেন—“ফ্রি ইন্টেলিজেন্স” বা মুক্ত বুদ্ধিমত্তা। এর মাধ্যমে দক্ষতার অভাব থাকা অঞ্চলগুলোতে প্রযুক্তি সহজলভ্য করে তুলতে পারে। ছোট ও সীমিত সম্পদের দেশগুলো এতে দারুণভাবে উপকৃত হতে পারে। তবে সঙ্গে সঙ্গে এও স্মরণ করিয়ে দেন—এই প্রযুক্তি কর্মসংস্থানেও প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক কাজ যন্ত্রের হাতে চলে গেলে, বিপাকে পড়তে পারেন বর্তমান কর্মজীবীরা।
সবশেষে বিল গেটস মনে করিয়ে দেন, মানুষের কিছু মৌলিক গুণ যেমন সহানুভূতি, সৃজনশীলতা এবং কৌশলগত চিন্তা—এখনো যন্ত্রের নাগালের বাইরে। তাই এআই-এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে, সেটিকে মানব-কেন্দ্রিকভাবে ব্যবহার করার ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে।
এম.কে.