
শেষ হলো পুলিশ সপ্তাহ
আবার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পুলিশের সর্বস্তরে দিকনির্দেশনা পাওয়াসহ নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবারের পুলিশ সপ্তাহ। অতীতের ভুল শুধরে জনআকাক্সক্ষাপূরণ ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা আলোচনার বিষয়টি শুরু থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল। এরই মধ্যে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে চমক হিসেবে ‘নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা’ রেখে শুরু করা হয়েছিল পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫।
প্রথমদিন থেকেই পুলিশের সংস্কার, রাজনৈতিক বলয় মুক্ত হতে স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠন, বিবাহিতদের এএসপি পদে নিয়োগ না দেওয়া, সবস্তরে ওভারটাইম ভাতাসহ একগুচ্ছ দাবি ওঠে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিট তাদের প্রেজেন্টেশনে সংকট, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে। তবে নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে উঠে আসে জনতার পুলিশ হতে করণীয় নানা দিক। জনতার পুলিশ হতে বাধাগুলোও তুলে ধরা হয় সভায়। এছাড়াও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও একগুচ্ছ দাবি ও সেগুলো বাস্তবায়নের প্রত্যাশা উঠে আসে সংশ্লিষ্টদের আলোচনায়।
সবশেষে শুক্রবার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সমাবেশ, আনন্দমেলা, স্টলের পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে শেষ হয় এবারের পুলিশ সপ্তাহ। এর আগে গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন এবং পদকপ্রাপ্ত ৬২ জনকে পদক পরিয়ে দেন।
ওইদিনই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনার ওপর ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমদিনের কার্যক্রম শেষ হয় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রেজেন্টশনের মাধ্যমে। ২য় দিনে প্রেজেন্টশন দেয় সিআইডি, র্যাবসহ পুলিশের ১০ টি ইউনিট। ওইদিন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবদের সঙ্গে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৩য় দিনের কার্যক্রম শুরু হয় পুলিশ সদস্যদের আইজি ব্যাজ প্রদানের মাধ্যমে।
এরপর আইজিপির সঙ্গে সম্মেলন শেষে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। ওইদিনই বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ অফিসার্স মেসের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩য় দিনের কার্যক্রম শেষ হয় অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত পুলিশ সদস্যদের পুনর্মিলনীর মাধ্যমে।
‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ : নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ দলীয় পুলিশ হয়ে যায়, সেটা তো বাহ্যিক। কিন্তু ভেতরে সমস্যা আছে। শুধু তাই নয়; ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ও বিধিতেও পদে পদে সমস্যা আছে। সর্বশেষ যে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, তারাও বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেনি।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের দূরত্বের গোড়ায় যেতে হবে। জনগণের বিপক্ষে পুলিশকে দাঁড় করানো যাবে না। কারণ, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজের অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হচ্ছে জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যা সমাধান হচ্ছে গণতন্ত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, আমরা পুলিশকে যেভাবে মিসইউজ করি, বিরোধী দল দমনের প্রেক্ষিতে অ্যাওয়ার্ড দেওয়াসহ সব বিবেচনায় নিয়ে যদি পুলিশকে সংস্কার না করতে পারি, তাহলে এই পুলিশকে কেবল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতেই সক্ষম হব, রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করাতে সক্ষম হব না।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন মনে হয়েছে এটি একটি ত্রুটিযুক্ত কমিশন। কারণ, পুলিশের ইমেজকে পুনরুদ্ধারের জন্য তেমন কিছু দেখিনি। একজন কনস্টেবলকে আপনি ১২-১৪ ঘণ্টা ডিউটি দিচ্ছেন, তার পরিবার, ব্যক্তিজীবন ও উৎকর্ষতা আসবে না। নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যরাই পুলিশের ইমেজ ফিরিয়ে আনতে পারবে।