
ছবি: সংগৃহীত।
ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিবেশী দেশ, যে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কাছ থেকে একতরফাভাবে নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করে এসেছে। এমন কোনও সুযোগ নেই, যা ভারত বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়নি। তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্পের আড়ালে ভারত বরাবরই বাংলাদেশে তার প্রভাব বিস্তার করেছে। তবে ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে এক দৃঢ় অবস্থান।
ক্ষমতায় এসেই অন্তর্বর্তী সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনুস, স্পষ্ট জানিয়ে দেন— দেশের স্বার্থবিরোধী কোনও চুক্তি বা প্রকল্প আর চলবে না। আর এ ঘোষণার পরই সরকার একযোগে ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০টি বড় প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বাতিল হওয়া প্রধান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম রেল সংযোগ প্রকল্প
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বিনামূল্যে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা পাওয়ার জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি ছিল বাংলাদেশের কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।
২. অভয়পুর-আখাউড়া রেলপথ সম্প্রসারণ
ভারতের সামরিক ও বাণিজ্যিক মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে গৃহীত এই প্রকল্পকেও বাতিল করা হয়।
৩. আশুগঞ্জ-আগরতলা করিডর
ভারতীয় পণ্যের পরিবহন সুবিধার জন্য নির্মিত হলেও সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করছিল বাংলাদেশ। সরকার এটিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
৪. ফেনী নদী পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প
যদিও ফেনী নদীর উৎস ভারতের মধ্যে নয়, তবুও দীর্ঘদিন ধরে ভারত একতরফাভাবে এই পানি ব্যবহার করছিল। বাংলাদেশের সরকার এবার এ চুক্তি পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দেয় এবং প্রকল্প বাতিল করে।
৫. কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন প্রকল্প
ভারত চাপ প্রয়োগ করে বাংলাদেশের অংশ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের চেষ্টা করছিল, অথচ এর কোনও বাস্তব বণ্টন কাঠামো ছিল না। ফলে এই প্রকল্পও স্থগিত করা হয়।
৬. বন্দর ব্যবহারের চুক্তির আওতাভুক্ত সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন প্রকল্প
চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে যে অবকাঠামো উন্নয়নের চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা বাংলাদেশের কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী হওয়ায় বাতিল করা হয়।
৭. ফারাক্কাবাদ সংস্কার প্রকল্পে বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতা
এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশকে নিজ অর্থে ভারতের অভ্যন্তরের ফারাক্কাবাদ সংস্কারে সহায়তা করতে বলা হয়েছিল, যদিও এই বাঁধের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল শুকিয়ে যাচ্ছে। সরকার এই প্রস্তাব সাফ প্রত্যাখ্যান করে।
৮. সিলেট-শিবচর সংযোগ প্রকল্প
এই সড়ক ব্যবহার করে ভারত বাংলাদেশ ভূখণ্ড অতিক্রম করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিত করার পর সরকার দ্রুত এই প্রকল্প বাতিল করে।
৯. পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ
ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহের আড়ালে ভারত বাংলাদেশের জ্বালানি বাজার দখলের পরিকল্পনা করেছিল। সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১০. চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের নতুন চুক্তির ধারা
ভারত এই দুই বন্দর দীর্ঘমেয়াদে একচেটিয়াভাবে ব্যবহার করতে চাইলেও বাংলাদেশ সরকার জানিয়ে দেয়— দেশের কৌশলগত স্থাপনায় কোনও বিদেশি দেশের একাধিপত্য মেনে নেওয়া হবে না। নতুন ধারা সংশোধনের মাধ্যমে এসব অনুমোদন বাতিল করা হয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় প্রশাসন এবং মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দিল্লির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের এই পদক্ষেপকে "হঠকারী" বলা হলেও, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা একে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন। মোদি সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা প্রচারণা শুরু করে, যার বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিভিত্তিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করল। এই প্রথমবারের মতো নয়াদিল্লিকে চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে ঢাকা। এবং সেটা শুধু কথায় নয়, বাস্তব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে— বাংলাদেশ কারো করুণার পাত্র নয়, বরং একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন স্বাধীন রাষ্ট্র।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=fUl2EFqIgoU&ab_channel=EkusheyTelevision-ETV
নুসরাত