ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল ফার্মাসিস্টের বিকল্প নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ১১:২০, ৩ মে ২০২৫

পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল ফার্মাসিস্টের বিকল্প নেই

পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে হাসপাতাল ফার্মাসিস্টদের বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ২৫ শয্যার হাসপাতালের জন্য একজন করে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও দেশীয় হাসপাতালগুলোতে তা অনুপস্থিত। স্বাস্থ্যসেবায় ডাক্তার, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্টদের পাশাপাশি সঠিকভাবে ওষুধ সংরক্ষণ, রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ ব্যবহার এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নজরদারি ও প্রতিরোধে একজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল (পিসিবি) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এমনটা বলেন। পিসিবি’র হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট কমিটির সভাপতি মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত হতে গেলে সবার আগে ফার্মাসিস্টদের মানসিকতা বদলাতে হবে। তিনি জানান, নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যেই সরকার ৭০০ ওষুধের দোকান খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। দরিদ্রদের জন্য উন্নত সেবা নিশ্চিতে সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ফার্মাসিস্টদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও তিনি এ সময় জানান।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ও পিসিবি’র সভাপতি মো. সাইদুর রহমান এবং সহসভাপতি অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান। এছাড়াও বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফার্মেসি অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান/চেয়ারম্যান, অ্যাক্রিডিটেশন ও এডুকেশন কমিটির বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাসপাতাল ফার্মেসি কোর্স পাঠদানকারী শিক্ষকরা এবং পিসিবি’র হাসপাতাল ফার্মেসি কমিটির সদস্যরাসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত হাসপাতাল ফার্মাসিস্টরা উপস্থিত ছিলেন।

পিসিবি সভাপতি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ভূমিকার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ওষুধের নিরাপদ ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার সার্বিক মান উন্নয়নে হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

পিসিবি’র সহসভাপতি অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬-এর ৪.৩ অনুচ্ছেদে ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। যেখানে ‘ঙ’ উপ-অনুচ্ছেদে দেশে পর্যায়ক্রমে সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে ‘হাসপাতাল ফার্মেসি’ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি।

দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ওষুধের নিরাপদ সংরক্ষণ, ওষুধের অপব্যবহার রোধ ও যৌক্তিক ব্যবহারে ফার্মাসিস্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রান্তিক পর্যায়ে ওষুধ বিপণন ও ডিস্পেন্সিং ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনতে এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে উন্নত বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বহির্বিভাগ ফার্মেসিতে ১ জন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট এবং আন্তঃবিভাগে প্রতি ৫০ শয্যার বিপরীতে ১ জন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করা দরকার। একই সঙ্গে নিয়োগকৃত ফার্মাসিস্টদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতির জন্য হাসপাতাল ফার্মেসিতে পদবিন্যাস করা প্রয়োজন।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে ফার্মাসিস্টরা বিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমানে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতি বছর প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধের চাহিদা মিটিয়ে পৃথিবীর ১৬০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করছে। মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দক্ষ চিকিৎসক ও নার্স ছাড়াও দক্ষ ফার্মাসিস্ট থাকা জরুরি, যারা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ নির্বাচন করবেন। উন্নত দেশে হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক হলেও বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালে এর প্রচলন নেই। তবে বেসরকারি খাতের বড় হাসপাতালগুলোতে এই ব্যবস্থা চালু আছে। ফলে এসব হাসপাতালে রোগীরা উন্নত সেবা পাচ্ছেন।

আলোচকরা বলেন, প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে ৬৫৪টি সরকারি হাসপাতালে একত্রিতভাবে ৫১ হাজার ৩১৬ জন মানুষের চিকিৎসার সুযোগ আছে। তবে এসব রোগীকে চিকিৎসকরা যে ব্যবস্থাপত্র দেন সে অনুযায়ী মানসম্মত ওষুধ সরবরাহে একজনও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নেই। ফলে ওষুধের মাত্রা সঠিক না হওয়ায় সুস্থ হওয়ার বদলে অনেক সময় রোগী মারাও যাচ্ছেন।

আফরোজা

×