
ছবিঃ সংগৃহীত
আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে জবাবদিহিতামূলক সাংবাদিকতার সম্ভাবনা বাড়লেও পুরনো ভয় ও নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা গেলেও অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো সেলফ সেন্সরশিপ বা চুপ থাকার নীতিতে চলছে। এ বাস্তবতায় স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চায় বিভিন্ন সুপারিশ দিয়েছে সরকার-গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
বিশ্ব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গত বছরের তুলনায় ১৬ ধাপ এগিয়ে বর্তমানে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম।
দীর্ঘদিনের চাপ ও ভয়
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মামলা, হামলা, এমনকি গুমের আশঙ্কায় সাংবাদিকরা বিগত বছরগুলোতে চরম চাপের মধ্যে ছিলেন। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কেউ কেউ মনে করছেন, সেই চাপ কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু সাংবাদিকের সরকারঘেঁষা আনুগত্যপূর্ণ সাংবাদিকতা ও অতিরিক্ত প্রশংসা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আবার কেউ কেউ শেখ হাসিনার অর্থনীতির প্রশংসা করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন।
৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর যেসব সাংবাদিক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন, তাঁদের কেউ কারাগারে, কেউ আত্মগোপনে, আবার কেউ চাকরি হারিয়েছেন।
“নতুন বাস্তবতায় কাজ করছি”
একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক যমুনা নিউজকে বলেন, “আমরা নতুন বাস্তবতায় কাজ করছি। কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, তবে বিশ্বাস করি সেগুলো কাটিয়ে উঠব। আগে ভাবতে হতো, কোন জায়গা থেকে ফোন আসবে কিনা, নিউজটা থামানো হবে কিনা—এখন তা কিছুটা কমে এসেছে।”
তবে প্রশ্ন উঠছে—এই পরিবর্তনের সুযোগে কতটা অনুশীলন হচ্ছে জবাবদিহিতামূলক সাংবাদিকতা?
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সংবাদমাধ্যম ঘেরাও, অযৌক্তিক আক্রমণ ও উগ্র সংস্কৃতি এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই এখনও নিজেরাই সংবেদনশীল বিষয় এড়িয়ে চলছেন, চুপ থাকছেন।
ভয়ডরহীন পরিবেশের দাবি
আরেকজন সম্পাদক জানান, “আমরা চাই এমন একটা পরিবেশ, যেখানে না সরকারের পক্ষ থেকে, না বাইরের কোনো শক্তির পক্ষ থেকে হুমকি থাকবে। সাংবাদিকরা যেন ভয়ডরহীনভাবে কাজ করতে পারে।”
তিনি বলেন, “এক ধরনের ‘শেকিনেস’ এখনও রয়ে গেছে—নিউজটা করব, কিন্তু সংশ্লিষ্ট পক্ষ হজম করবে কিনা, তা নিয়ে দ্বিধা থাকে।”
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ
সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করেছে। কমিশনের সদস্যরা আশাবাদী, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে গণমাধ্যমের জন্য একটি সুদিন ফিরে আসবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চূড়ান্ত পরিবর্তন নির্ভর করবে সাংবাদিক, মালিক ও সম্পাদক—এই শিল্পের অংশীজনদের মানসিকতা ও সরকারের আন্তরিকতার উপর।
একজন কমিশন সদস্য বলেন, “যতক্ষণ না দেশে গণতন্ত্র সুদৃঢ় হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বাধীন গণমাধ্যমও পুরোপুরি কার্যকর হবে না।”
বাংলাদেশ ২০২৫ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৬ ধাপ এগিয়ে এখন ১৪৯তম স্থানে।
মারিয়া