
ছবি: সংগৃহীত
চীনের এক অসহায় পিতা সন্তানের ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ জোগাতে চুরি করেছিলেন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার। কিন্তু আইন তাকে ক্ষমা করেনি। ছেলের মৃত্যুর সময়ও তিনি ছিলেন কারাগারে। হৃদয়বিদারক এই ঘটনা সামনে এসেছে চীনা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জিলিন প্রদেশের বাসিন্দা ইউ হাইবো (২৯) নামের ওই ব্যক্তি বর্তমানে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তার ছেলে জিয়াযুয়ে মাত্র তিন বছর বয়সে আক্রান্ত হয় লিউকেমিয়ায় (ব্লাড ক্যান্সার)। অসুস্থ সন্তানের জন্য নিজের শেষটুকুও দিয়েছেন হাইবো—ঘরবাড়ি বিক্রি করেছেন, দিনের পর দিন শ্রমিকের কাজ করেছেন, ধারদেনা করেছেন।
‘সব কিছু হারাতে প্রস্তুত ছিলাম, শুধু ছেলেটাকে বাঁচাতে’
এক সাক্ষাৎকারে হাইবো বলেন, ‘ডাক্তার যখন বলল আমার ছেলের রক্তে ক্যান্সার, আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, যা কিছু আছে, সব কিছু দিয়েও ওকে বাঁচাব।’
হাইবো তখন গাড়ির কারখানায় চাকরি করতেন, বেতন মাত্র ২ হাজার ইউয়ান। স্ত্রী ছিলেন গৃহিণী। একসঙ্গে সন্তান প্রতিপালন করা কঠিন ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে চিকিৎসার খরচ দাঁড়ায় হাজার হাজার ইউয়ান। তখনই বন্ধুর পরামর্শে হাইবো চুরি করেন সড়কের পাশে থাকা ২০টিরও বেশি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার। সেগুলো থেকে তামা বের করে বিক্রি করেন, পান প্রায় ৩০ হাজার ইউয়ান।
এই ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে এবং চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। স্ত্রী তখন একা হয়ে পড়েন—সন্তান ও সংসার সামলানো তার একার কাঁধে এসে পড়ে।
হাইবো কারাগারে থাকাকালে মাত্র ৯ বছর বয়সে মারা যায় জিয়াযুয়ে। মৃত্যুর মাত্র এক মাস আগে বাবাকে শেষবারের মতো হাসপাতালে দেখা করতে দেওয়া হয়েছিল।
জিয়াযুয়ের শেষ কথা ছিল, ‘বাবা, আমার কথা বেশি ভেবো না। যখন তুমি মুক্ত হবে, চলে এসো হ্রদের ধারে। আমি সব সময় ওখানেই থাকব।’
২০২৪ সালের নভেম্বরে মুক্তি পান হাইবো। এরপর থেকে তিনি প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে ছেলের শেষ আশ্রয়, কারাগারের পাশে সেই হ্রদের ধারে যান।
চলতি বছরের ফাদার্স ডে-তে তিনি সেখানে নিয়ে যান ফুল, কেক আর খেলনা। যেন এখনো তার ছেলে তার সঙ্গেই আছে।
এই ঘটনা এখন চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। অনেকে বলছেন, ‘এটি কেবল একজন অপরাধীর গল্প নয়, এটি এক অসহায় বাবার করুণ আর্তির গল্প, যার অপরাধ ভালোবাসা।’
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।
রাকিব