
ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে হরমোনজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে প্রায় সাত কোটি মানুষ কোনো না কোনো হরমোন সমস্যায় ভুগছেন। হরমোন সিস্টেম এবং নার্ভাস সিস্টেম, এই দুই ব্যবস্থা মানবদেহ নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে হরমোনই প্রায় ৫০ ভাগ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রচলিত হরমোনজনিত রোগগুলোর মধ্যে *থাইরয়েড সমস্যা* অন্যতম। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। অপরদিকে, ইনসুলিনের ঘাটতি ও ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের কারণে ডায়াবেটিস, আরেকটি সাধারণ হরমোন রোগে আক্রান্ত প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ।
হরমোনজনিত অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে—
* নারীদের মাসিকের অনিয়ম, মুখে দাড়ি বা গোঁফ ওঠা,
* বন্ধ্যত্ব,
* শিশুদের খাটো হয়ে যাওয়া,
* *চুল পড়া*,
* বুদ্ধিমত্তা হ্রাস,
* ওজন বেড়ে যাওয়া
ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞরা জানান, থাইরয়েড গ্রন্থি গলার সামনে প্রজাপতির মতো একটি গ্ল্যান্ড, যেখান থেকে থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয়। এই হরমোনের ঘাটতি হলে (হাইপোথাইরয়েডিজম) রোগী মোটা হয়ে যেতে পারেন, গলার স্বর কর্কশ হয়, চুল পড়ে যায়, অতিরিক্ত মাসিক হয় এবং বাচ্চাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। অপরদিকে, হরমোন অতিরিক্ত হলে (হাইপারথাইরয়েডিজম) হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, ওজন কমে যায়, মাসিক কমে যায় এবং চোখ বড় হয়ে যেতে পারে। অবহেলা করলে ‘থাইরয়েড স্টর্ম’-এর মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।
এ ধরনের রোগ শনাক্তে খুব সাধারণ দুটি পরীক্ষা যথেষ্ট, TSH ও FT4। এ ছাড়া অ্যান্টি-থাইরয়েড অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায়, রোগীকে আজীবন ওষুধ খেতে হবে কিনা।
আরেকটি আলোচিত হরমোন হচ্ছে গ্রোথ হরমোন। এর ঘাটতিতে শিশুদের বৃদ্ধি থেমে যেতে পারে, তারা বেটে বা খাটো হয়ে যায়। চিকিৎসা সময়মতো শুরু করলে তাদের উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা জানান, অনেকেই ১৪ বছরের পরে চিকিৎসা নিতে আসেন, তখন হাড়ের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসার সুফল পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বিশ্বখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসি গ্রোথ হরমোনের চিকিৎসার কারণেই আজকের ‘মেসি’ হয়েছেন।
এ ছাড়া স্টেরয়েডের অপব্যবহার, বিশেষ করে রঙ ফর্সা করা, শ্বাসকষ্ট, মোটা হওয়া বা কবিরাজি ওষুধের মাধ্যমে- ডায়াবেটিস, হাড় দুর্বলতা, প্রেসার বৃদ্ধি, চোখে ছানি পড়াসহ বহু জটিলতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রোল্যাকটিন হরমোন বাড়ার কারণে অবিবাহিত নারীদের স্তন থেকে দুধ নির্গত হওয়া এবং মুখে পুরুষালি লোম ওঠার সমস্যাও দেখা যায়। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে এসব সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের আহ্বান- "আর নয় অবহেলা, হরমোন রোগ নিয়ে হোক সচেতনতা। সময়মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা সম্ভব।"
আঁখি