ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ থামাতে কি কিছু করতে পারবে ইউরোপ ?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০১, ২২ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ থামাতে কি কিছু করতে পারবে ইউরোপ ?

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধ করতে এক যৌথ উদ্যোগে নামছে ইউরোপের তিন প্রভাবশালী দেশ—জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য। এই তিন দেশকে বলা হয় “E3”। গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তারা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে, এই আলোচনার কোনও বাস্তব সমাধান বের হয়নি।

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া: “ইউরোপ কিছু করতে পারবে না”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আলোচনাকে ব্যর্থ বলে অভিহিত করে বলেন, “ইরান ইউরোপের সঙ্গে কথা বলতে চায় না, তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। ইউরোপ এই পরিস্থিতিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।”

তিনি আরও জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ইরানে সামরিকভাবে যুক্ত হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেবেন।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি বলেন, “আমরা আলোচনার জন্য আসিনি, কেবল শুনতে এসেছি। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও কোনো আলোচনা সম্ভব নয়।”

অতীত চুক্তি ও বর্তমান বিভাজন
২০১৫ সালে করা পরমাণু চুক্তি (JCPOA) ইরান ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি ছিল। এই চুক্তিতে ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন। এরপর ইরানও চুক্তি মানা বন্ধ করে দেয়।

বর্তমানে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের অবস্থান ইসরায়েল ইস্যুতে এক নয়—

  • জার্মানি সরাসরি ইসরায়েলপন্থী অবস্থানে
  • যুক্তরাজ্য লেবার পার্টির জয়লাভের পর নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে
  • ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে

বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সামরিক শক্তি থাকলেও তাদের প্রভাব যথেষ্ট নয়। তবে তাদের একটি সুবিধা হলো— ইসরায়েল ও ইরান উভয়ই তাদের ‘বিশ্বাসযোগ্য মধ্যস্থতাকারী’ মনে করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় না হলে সফলতা পাওয়া কঠিন হবে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকাও সন্দেহজনক
চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—তিনটি দেশের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও এই সংঘর্ষে কার্যকর কিছু করতে পারবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষ করে চীনের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং রাশিয়ার নীরবতা আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে জটিল করে তুলেছে।

ইউরোপের তিন প্রভাবশালী দেশগুলো কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করছে ঠিকই, তবে তাদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন, যুক্তরাষ্ট্রের একপাক্ষিক অবস্থান এবং ইরান-ইসরায়েল উভয়ের অনমনীয় মনোভাব মিলিয়ে কূটনৈতিক সমাধান এখন অনেক দূরের পথ। যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ও ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।

মুমু ২

×