ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

পেটের মেদে বাড়ে ভয়াবহ চর্মরোগের ঝুঁকি, নতুন গবেষণায় মিলল প্রমাণ

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ২২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:৪৩, ২২ জুন ২০২৫

পেটের মেদে বাড়ে ভয়াবহ চর্মরোগের ঝুঁকি, নতুন গবেষণায় মিলল প্রমাণ

ছবি: সংগৃহীত

পেটের মেদ শুধু দেহের আকৃতি বদলায় না, এটি ছুলি বা সোরায়াসিসের মতো ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়সম্প্রতি ব্রিটেনে পরিচালিত এক বৃহৎ গবেষণায় এ তথ্য সামনে এসেছে। কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকরা ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ব্রিটিশ নাগরিকের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চাঞ্চল্যকর ফলাফল প্রকাশ করেছেন।

‘জার্নাল অব ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজি’তে প্রকাশিত এই গবেষণায় শরীরের মোট ২৫টি মেদ-সম্পর্কিত পরিমাপ বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে পেটের মেদযেমন কোমর-নিতম্ব অনুপাত, কোমরের পরিধি, পেটের চর্বির অনুপাত ইত্যাদিছিল ছুলির (সোরায়াসিস) সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কযুক্ত। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বডি মাস ইনডেক্স (BMI), যেটিকে সাধারণত স্থূলতার প্রধান সূচক ধরা হয়, সেটি এই ক্ষেত্রে তেমন কার্যকর বলে প্রতিপন্ন হয়নি।

পেটের মেদই সোরায়াসিসের মূল ঝুঁকি?

গবেষকদলের প্রধান ডা. রবি রামেসুর, কিংস কলেজ লন্ডনের সেন্ট জন’স ইনস্টিটিউট অব ডার্মাটোলজির গবেষক, বলেন, ‘আমাদের গবেষণা বলছে, শরীরের কোথায় মেদ জমছে তা ছুলির ঝুঁকির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে কোমরের চারপাশের চর্বি সরাসরি এই রোগের সঙ্গে যুক্ত।’

তিনি আরও বলেন, এই ফলাফল আমাদের ছুলি (সোরায়াসিস) শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতিকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়।

ডা. ক্যাথরিন এইচ. স্মিথ বলেন, ‘স্থূলতা বিশ্বব্যাপী বেড়েই চলেছে। তাই শরীরের বিভিন্ন অংশে মেদ জমার ধরণ কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগকে প্রভাবিত করে তা বোঝা জরুরি। এই গবেষণায় দেখা গেছে, পেটের মেদ ছুলির ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি কোনো জেনেটিক পূর্বধারণা ছাড়াও।’

তিনি আরও বলেন, কোমরের মাপ পরিমাপ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া ছুলি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, এই গবেষণায় শুধুমাত্র ইউকে বায়োব্যাংকে অন্তর্ভুক্ত শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে ফলাফলগুলো ভিন্ন জাতি বা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য নাও হতে পারে। আগামীতে আরও বহুজাতিক ও বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে গবেষণা করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা।

গবেষণার এক পর্যায়ে ডা. রামেসুর বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে অবাক হয়েছি যেভাবে প্রতিটি পেটের মেদসংক্রান্ত সূচকের সঙ্গে ছুলির সম্পর্ক পাওয়া গেছে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক আরও দৃঢ়।’

তিনি মনে করেন, এই সম্পর্কের পেছনে জটিল জৈবিক প্রক্রিয়া কাজ করছে, যা এখনো পুরোপুরি অনাবিষ্কৃত এবং যার বিস্তারিত অনুসন্ধান প্রয়োজন।

সোরায়াসিস: শরীরের চেয়েও বেশি মানসিক বোঝা

ছুলি (সোরায়াসিস) একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত ত্বক রোগ, যা শুধু শরীরের উপর নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও বড় ধাক্কা দেয়। চুলকানি, লালচে প্যাচ ও ত্বকের মোটা হয়ে যাওয়া ছাড়াও, এটি আত্মবিশ্বাসের ওপরও প্রভাব ফেলে। নতুন এই গবেষণা পেটের মেদ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বকে শুধু হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস নয়, ত্বকজনিত রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও সামনে নিয়ে এসেছে।

পেটের মেদ কমানোই হতে পারে ছুলি বা সোরায়াসিস প্রতিরোধের একটি কার্যকর উপায়, বলছেন গবেষকরা।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×