ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

ভয় নয়, সচেতনতা: কফি ও রক্তচাপ নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ২২ জুন ২০২৫

ভয় নয়, সচেতনতা: কফি ও রক্তচাপ নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

কফি মানেই শুধু সকালের ঘুম কাটানো নয়—এটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে মনোযোগ ও সচেতনতা বাড়ায়। তবে এই একই উদ্দীপক বৈশিষ্ট্যই স্বল্পমেয়াদে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।

পুষ্টিবিদ কিরন ক্যাম্পবেল বলেন, “ক্যাফেইন সাময়িকভাবে এমনকি যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই, তাদেরও রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ ঘটায় এবং অ্যাডেনোসিন নামক একটি রাসায়নিককে বাধা দেয়, যা স্বাভাবিকভাবে রক্তনালীগুলোকে প্রশমিত রাখতে সাহায্য করে।”

 কফি রক্তচাপকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

১. অ্যাডেনোসিন ব্লক করে

অ্যাডেনোসিন আমাদের ঘুমভাব বাড়ায় ও রক্তনালীগুলোকে আরাম দেয়। কিন্তু ক্যাফেইন এটি বাধা দিলে রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়, ফলে রক্তচাপ বাড়ে।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান

অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ রক্তনালীর স্বাভাবিক সম্প্রসারণে বাধা দেয়। কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে পলিফেনলস, এ সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে, যা দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

৩. অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ বাড়ায়

ক্যাফেইন অ্যাড্রেনালিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বাড়াতে পারে। তবে এটি বেশি মাত্রায় কফি পানকারীদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রভাব ফেলে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব উচ্চ রক্তচাপের রোগী দিনে অর্ধেক থেকে দুই-আড়াই কাপ কফি পান করেন, তাদের রক্তনালীর কার্যক্ষমতা কফি না পানকারীদের তুলনায় ভালো ছিল।

কোন পদ্ধতিতে বানানো কফি ভালো?

কফির প্রভাব শুধু ক্যাফেইনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না—তা কীভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

  • আনফিল্টার্ড কফি (যেমন ফ্রেঞ্চ প্রেস বা তুর্কি কফি) ডিটারপিন নামে একটি উপাদান বেশি থাকে, যা খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়াতে পারে।

  • ফিল্টার করা কফি (যেমন ড্রিপ কফি বা পোর-ওভার) ডিটারপিন কম থাকে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

রক্তচাপের রোগীদের জন্য কতটা কফি নিরাপদ?

  • মার্কিন FDA এবং হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দৈনিক ৪০০ মি.গ্রা. পর্যন্ত ক্যাফেইন (৪–৫ কাপ কফি) স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত নিরাপদ।

  • তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি কমিয়ে ১ কাপের মধ্যে রাখা উত্তম।

ডা. এডো পাজ বলেন, “রোগীর শরীর কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে তা দেখা গুরুত্বপূর্ণ। চাইলে আপনি অর্ধ-ক্যাফ বা ডিক্যাফ কফি বেছে নিতে পারেন।”

 উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কফি পানের টিপস:

  • রক্তচাপ মাপুন কফি পান করার আগে ও পরে, যাতে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারেন।

  • অন্যান্য ক্যাফেইন উৎস (চা, চকোলেট, সফট ড্রিঙ্ক, এনার্জি ড্রিঙ্ক) নিয়েও সচেতন থাকুন।

  • ডিক্যাফ বা অর্ধ-ক্যাফ কফির অভ্যাস গড়ুন, যাতে কফির স্বাদ বজায় রেখে ক্যাফেইন কমিয়ে আনা যায়।

  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যক্তিগত নিরাপদ মাত্রা জেনে নিন।

ভয়ের কিছু নেই—কফি প্রেমীরা সচেতন থাকলেই নিরাপদ।
ক্যাফেইনের তাৎক্ষণিক প্রভাব থাকলেও, কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপের উপর উপকারী প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যদি আপনি সুস্থ হন, তবে দিনে ৩–৪ কাপ কফিও নিরাপদ। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Jahan

×