
"কোটা না মেধা? মেধা, মেধা!" এই স্লোগান দিয়েই শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের সেই গণঅভ্যুত্থান, যার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। "দফা এক, দাবি এক ; কোটা নট কাম ব্যাক" ধ্বনিতে রাজপথ উত্তাল, শিক্ষার্থীরা বলেছিল এ লড়াই শুধু নিয়োগে কোটা নয়, এ লড়াই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে।
এই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিল হাসিনার বেপরোয়া বক্তৃতা। তার স্বৈরাচারী কণ্ঠের প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে আরেকটি স্লোগান, "তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার! স্বৈরাচার!"। এই আওয়াজ কেবল ঢাকাতেই নয়, ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। পুলিশ যখন গুলি চালায়, তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আবু সাইদ, ওয়াসিম, মুগ্ধ, রাব্বির মতো কত তাজা প্রাণ। ছাত্র-জনতার গলা তখন আরও শানিত হয়ে ওঠে, "যে হাত গুলি করে, সে হাত ভেঙে দাও", "আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে?"।
ছাত্র-জনতার সামনে দাঁড়ায় হাসিনার পেটোয়া বাহিনী— পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ। অস্ত্র হাতে পুলিশচ যখন রাজপথে নামে তখন হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, "কে এসেছে? কে এসেছে? পুলিশ এসেছে, পুলিশ এসেছে ; কি করছে? কি করছে? স্বৈরাচারের পা চাটছে!"। রাজপথে তখন একটাই ডাক ছিলো, "অ্যাকশন! অ্যাকশন! ডাইরেক্ট অ্যাকশন!", "দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেবো রক্ত, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়!"।
এ আন্দোলন শুধু শহরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাংলার মেঠোপথে, রিকশাওয়ালার ঠোঁটে, এমনকি বনানী-গুলশানের অভিজাত কণ্ঠেও শোনা যায়, "লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারোর বাপের না!"। "স্বৈরাচারের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান", "বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি, গুলি কর"। এই শব্দগুলো যেন রাজপথে ইতিহাস লিখে গেছে।
শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে যখন আসে কথিত সংলাপের প্রস্তাব, তখন উত্তরে ওঠে, "তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইদের ফিরিয়ে দে", "লাশের ভেতর জীবন দে, নাইলে গদি ছাইড়া দে!"। সীমান্তে গুলি খাওয়া মানুষ দেখে জনতা বলেছিলো সেদিন, "সীমান্তে মানুষ মরে, বিজিবি কী করে? সীমান্তের বিড়ালেরা, সীমান্তে ফিরে যা!"
বাংলাদেশের এ আন্দোলনে কোলকাতার রাজপথে কিছু তরুণরাও আওড়ায়, "শেখ হাসিনার অনেক গুন, পুলিশ দিয়ে করছে খুন!" ও "ছিঃ ছিঃ ছিঃ হাসিনা, তোমায় ভালোবাসিনা!" অবশেষে, ৩ আগস্ট নয় দফা থেকে এক দফার ঘোষণা হয়, "এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা গদি ছাড়!" দিয়ে। হাসিনার পতনের স্লোগান ছিল আরও স্পষ্ট, "চশমাওয়ালী বুবুজান, নৌকা লইয়া ভারত যান!" আর ৫ আগস্ট সেই দিন, যেদিন হাসিনা গোপনে দেশ ছাড়ে, রাজপথে তখন উল্লাসিত জনতা চিৎকার করে বলেছিলো, "পালাইছে রে পালাইছে, শেখ হাসিনা পালাইছে!"
এই ছিল বাংলার জাগরণ, যেখানে স্লোগানে স্লোগানে রচিত হয়েছে স্বৈরাচার পতনের ইতিহাস। যেখানে রাজপথে দাঁড়িয়ে এক নতুন বাংলাদেশ বলেছে, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র আর স্বাধীনতা ; এবার জনগণের হাতেই।
তথ্যসূত্রে - শওকত হোসেন
সহ-প্রচার সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, জিয়া সাইবার ফোর্স - জেডসিএফ।
Jahan