ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

৫ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হল ছাড়বে না বলে সাফ জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ২২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৫৪, ২২ জুন ২০২৫

৫ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হল ছাড়বে না বলে সাফ জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত

৫ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হল ছাড়বে না বলে সাফ জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার টিমের হল পরিদর্শনে না এনে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি তাদের।

রোববার (২২ জুন) বেলা ১২টার দিকে দাবির বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কাউন্সিলের সাথে বৈঠক শেষে এমন হুঁশিয়ারি দেন তারা। 

শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমাদের দাবির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাজের কোন অগ্রগতি দেখিনি। হল ত্যাগের যে নোটিশ ছিল আমরা সেটি প্রত্যাখান করেছি এবং সেটির সাথে দ্বিমত পোষণ করছি। আমরা হল ত্যাগ করছি না।

তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ আজকের মিটিংয়ে কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পরেননি। এ কারণে আমরা ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামে দিয়েছি; আগামীকাল স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও তার টিম যদি স্বশরীরে হলের ভগ্নদশা পরিদর্শনে না আসেন, তবে আমাদের আন্দোলন কঠোর থেকে আরো কঠোরতর হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও সহযোগী টিম শিক্ষর্থীদের সাথে বৈঠকে বসে দাবি সমুহের সুস্পষ্ট সমাধান দিতে হবে। 

তিনি বলেন, আমরা শঙ্কা করছি আমাদের আন্দোলন দমনের জন্য হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ভবনের কোন সংস্কারের জন্য নয়। যেহেতু ভবনের কোন সংস্কার হচ্ছে না সেহেতু আমরা হল ত্যাগ করছি না। আমরা আশা করছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের দাবির সাথে একমত হবেন এবং উনারা নিজে এসে পরিদর্শন করবেন। যদি না আসে তবে বুঝতে হবে তাদের অবহেলা খুবই ভালভাবে দৃশ্যমান। 

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, তাদের দাবির সাথে একমত। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে এই জিনিসটা একবারেই হয় না। বিগত ১৫ বছর ধরে হাসপাতালকে ৫ হাজার বেডে উন্নিত করে একটা মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হযেছিল। বাস্তবে গত ১৫ বছরে একনেকে পাশ হয় নাই। সেই মেগা প্রকল্পের স্বপ্ন দেখানোর কারণে অন্য কোন বড় সংস্কার ঢাকা মেডিকেলে হয় নাই। যে কারণে কলেজের একাডেমিক ভবন ও ছাত্রদের হোস্টেলের এই দুর্দশা। এর ভিতরে ফজলে রাব্বি হলের মেইন বিল্ডিংয়ের চারতলায় অবস্থা খুবই খারাপ যেটা আপনারা দেখেছেন। এবং সেই চারতলা পিডব্লিউডি কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রদের জীবনের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে গত নয় মাস ধরে এই পরিত্যক্ত ভবন থেকে নামানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে আসছি। তারা দাবি করছে তারা কোথায় নামবে?

তিনি বলেন, আমাদের যে বাকি তিনটা ব্লক আছে, সেগুলো এখনও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় নাই। সেখানে আমাদের ছাত্ররা থাকে। কিন্তু ছাত্রদের ভিতরে সিনিয়র ছাত্রদের একরকম চাহিদা আছে। কেউ এক রুমে দুজন থাকতে চায়, কেউ এক রুমে তিনজন থাকতে চায়। তার চেয়ে বেশি থাকবে না। তারা সবাই যদি একমত হতো, আমার মেডিকেলে যে নতুন ব্যাচ আসার কথা সেই ব্যাচ মিলে পুরো ছয়টা ব্যাচ মিলে ছাত্র সংখ্যা ৭৫৫ জন। ওই চারতলা বাদ দিয়ে, গণরুম বাদ দিয়ে ছাত্ররা যদি আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে থাকে তবে আমরা বাংলাদেশি স্ট্যান্ডার্ডে ৭৬৬ জন ছাত্রের অ্যালটমেন্ট দেওয়া সম্ভব। 

অধ্যক্ষ বলেন, ছাত্ররা এই দাবি থেকে ঈদের আগে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজকে বন্ধ ঘোষণা করেছে। তারা ক্লাসে আসে না। তালা লাগিয়া কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে তারা নিজেরাই। তারপরেও আমরা ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে আছি। আমরা এই ভঙ্গুর অবস্থার ভেতরে থাকতে চাই না। আমাদের দুটো কনসার্ন, একটা ছাত্রদের নিরাপত্তা আরেকটা দ্রুত একাডেমিক কাজে ফিরে আসা যায় কিনা। সেজন্য একাডেমি কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপাতত কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হবে। তাদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে এবং ওই চারতলা থেকে আজকেই সবাইকে নামতে হবে এবং হলে শিক্ষকরা যেভাবে সিট বন্টন করবে, সেই অনুযায়ী  ছাত্ররা যদি ওঠে তাহলে আমরা একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারব। আমরা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগের মেগা প্রকল্প আর হবে না। ১৯টা মেডিকেলে ১৯টা হোস্টেলের কাজ হওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে ১৭ টি কাজ শুরু হয়ে গেছে। দুটো মেডিকেলে হোষ্টেল হওয়ার কথা ছিল সেই মেডিকেল কলেজে লাগবে না। সেই দুইটা মেডিকেল হোষ্টেল ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু সেটা একনেকের ব্যাপার, পরবর্তী একনেকে এটা পাস হবে বলে আশা করছি। এই বিষয়গুলি ছাত্রদেরকে জানানো হয়েছে। আমি আশাবাদী তারা বাসায় ফিরে যাবে, আমাদের সাথে সহযোগিতা করবে। এবং পরে সুযোগ হলে আমরা একসাথে মন্ত্রণালয় কথা বলব।

আবির

×