ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

কলাপাড়ায় বিরামহীন বৃষ্টিতে ৪০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী, স্লুইসগেট আটকে ধরা হয় মাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ২২ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:০০, ২২ জুন ২০২৫

কলাপাড়ায় বিরামহীন বৃষ্টিতে ৪০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী, স্লুইসগেট আটকে ধরা হয় মাছ

ছবিঃ সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চার দিনের টানা বৃষ্টিতে অন্তত ৪০ গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

রবিবার (২২ জুন) বিকেল থেকে বৃষ্টির ধারা কিছুটা কমেছে। সূর্য ক্ষণিকের জন্য তীর্যক আলো দিয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমছে না। মানুষ কার্যত গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। যদিও এই সময়ে মাঠে কোনো ফসল না থাকায় কৃষকের তেমন ক্ষতি হয়নি, তবে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। যোগাযোগে সমস্যা বেড়েছে। টানা বর্ষণে বহু পুকুর ডুবে মাছ বেরিয়ে গেছে, তলিয়ে গেছে মাছের ঘের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কলাপাড়া পৌরশহরের চিঙ্গুরিয়া মহল্লার অন্তত দুই শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকায় এমন দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। এছাড়া পানি চলাচলের খাল দখল-ভরাট করে ঘরবাড়ি স্থাপন করায় এমন সমস্যা প্রকট হয়ে আছে। বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র জানান, আমাদের একদিনের বৃষ্টির পানি তিন দিনেও নামে না। হাঁটু পানি ভেঙে চলাচল করতে হয়। নীলগঞ্জে ফতেহপুর, সোনাতলা ও নিজকাটা গ্রামের কৃষকরা জানান, সব ডুবে গেছে। পুকুরের পাড়ে কেউ কেউ মাছ রক্ষার জন্য জালের বেড়া দিয়েছেন। তাতেও শেষ রক্ষা হয় না। ফতেহপুর স্লুইসটি দিনের বেলা আবার বন্ধ করে রাখা হয়। রাতের বেলা জাল পেতে একটি মহল তাদের সুবিধামতো পানি নামায়। তারা মানুষের ভোগান্তির চিন্তা না করে মাছ ধরে।

টিয়াখালীর নাচনাপাড়া, রজপাড়ার একাংশ ডুবে আছে। মানুষের ঘরের পিরার (ফ্লোর) পর্যন্ত ডুবে গেছে। পানি চলাচলের খাল দখল করে বাড়িঘর করায় এমন দুরবস্থা হয়েছে। কুয়াকাটা পৌর এলাকার একাধিক মহল্লা পানিতে ডুবে আছে। পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ চরমে। লালুয়ার জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পানিবন্দী দশার মধ্যে হাঁটু সমান পানি পেরিয়ে ক্লাস করতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, পাশের খালগুলো পায়রা বন্দর উন্নয়নের কাজে ভরাট করা হয়েছে। তাঁদের জায়গা উঁচু করায় পানি নিচের দিকে জমছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এখন চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। একই দশা উত্তর লালুয়ার নৌঘাটির আশপাশের গ্রামের মানুষের। জলাবদ্ধতা এখন তাদের স্থায়ী দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, পানি নিষ্কাশনের পথ না রেখেই খাল-বিল-নালা ভরাট করায় এমন জলাবদ্ধতায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের দাবি, স্লুইসগুলো পানির নিষ্কাশনের কাজে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হোক। না হলে তাদের দুর্দশা যাবে না। এছাড়া শহর কিংবা গ্রামে সরকারি খাস খালের বাঁধ, ঘের, স্থাপনা অপসারণ করা হোক। খাস হালট-নালা জনস্বার্থে দখলমুক্ত করা হোক।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, সরকারি খাল, নালা দখলদার উচ্ছেদ ও খালের বাঁধ অপসারণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ রবিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ইমরান

×