
ছবি: সংগৃহীত
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্ত, শিক্ষার্থীরা যদি লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়ায় কিংবা দলীয় ব্যানার নিয়ে ক্যাম্পাসে কোনো প্রোগ্রাম করে, তবে তাদের আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বেরোবি শাখার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও একাডেমিক শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আবাসিক হলে সিট বাণিজ্য এবং সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ থাকার বিষয়ে ইতিপূর্বে সিন্ডিকেট কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। গত ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১১তম সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদিত হয়।
ওই সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ করার পরেও কেউ বিভিন্ন ব্যানারে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অপচেষ্টা করলে এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক করণীয় এবং শান্তি নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বলা হয়, ‘ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আবাসিক হলে সিট বাণিজ্য এবং সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার পরেও কেউ যদি ক্যাম্পাসে উক্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তার শান্তি হিসেবে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা যেতে পারে। প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শান্তি বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হলো।’
এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট শুরু করে। কেউবা পোস্ট করে লিখেছেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার কারণে আমার ফাঁসি চাই, বহিষ্কার চাই। কেউবা মন্তব্য করে বলছে, আরেক স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ এই সিদ্ধান্ত! যেকোন বিপ্লবী পক্ষকে দমানো মানেই স্বৈরাচারকে প্রমোট করা! আবার কেউ মন্তব্য করেছেন এই বলে যে, আবু সাঈদ হত্যার বিচার এক সেমিস্টার আর গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় আজীবন বহিষ্কার, এগুলো হাস্যকর। এগুলোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় দোসরদের সুযোগ ও প্রশাসন স্বৈরাচারী হওয়ার চেষ্টা করছে। আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন দোসর ও ফ্যাসিবাদিদের ঠাঁই হবে না। অন্য আরেক জন মন্তব্য করে লিখেছেন, এক শ্রেণির নব্য স্বৈরাচারদের আধিপত্য বিস্তারের নোংরা রাজনীতির অপকৌশল এটা।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বিপ্লবী ধারায় উজ্জীবিত এক অনন্য ক্যাম্পাস। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে আমরা সেটিকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য আগামী ২ মাসের মধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাই।
লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরে সভাপতি মোঃ সোহেল রানা বলেন, বহুদিন ধরেই আমাদের দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো লেজুড়বৃত্তিক ও দলান্ধ ছাত্র রাজনীতির কারণে অস্থিরতা, সহিংসতা ও শিক্ষার ব্যাঘাতে ভুগছে। এই ধরনের রাজনীতি ছাত্রদের কল্যাণে না গিয়ে বরং ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এতে করে প্রকৃত মেধাবী, আদর্শনিষ্ঠ ছাত্ররা রাজনীতি থেকে বিমুখ হয়েছে এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময়ই আদর্শ, নৈতিকতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার ভিত্তিতে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে। আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি থাকা উচিত কিন্তু সেটি যেন হয় ছাত্রদের অধিকার, ন্যায্য দাবি এবং সমাজ পরিবর্তনের ইতিবাচক হাতিয়ার হিসেবে। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত যদি সত্যিকার অর্থে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির অবসান ঘটাতে পারে, তবে তা হবে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের একটি বড় পদক্ষেপ।
লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন ইসলাম বলেন, দেশের প্রতিটি সংকটে ছাত্ররাই লড়াই সংগ্রাম করে বিজয় এনেছে। এ কারণেই ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আমি মনে করি ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রেসক্রিপশনে করা। তাদের অপকর্ম ঢাকার জন্য এবং তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই একটি মহল এই সিদ্ধান্তের পিছনে কাজ করছে। ক্যাম্পাসে গোপনে একটি মহলের নোংরা রাজনীতি চলছে। তাই প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ছাত্রদল তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে কাজ করে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
এম কে পুলক আহমেদ/রাকিব