
ছবি: জনকণ্ঠ
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলাস্থ আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের সহকারী অধ্যাপক হাসমত আলী দম্পতি। হাসমত আলী আলহাজ ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং তার সহধর্মিনী আফরোজা বুলবুল সুজাত আলী কলেজ পিংনা প্রভাষক।
তারা দুজনেই কলেজ শিক্ষক হলেও নেশায় অসম্ভব বৃক্ষপ্রেমী। হাসমত আলীর ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি ছিল অকৃত্রিম টান ও ভালোবাসা। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি বৃক্ষ প্রকৃতি নিয়ে লেখা বই পড়তেন। এর মাঝে নিসর্গী দ্বিজেন শর্মার লেখা পড়ে তার প্রকৃতি প্রেম আরো গভীর হয়। সেই শ্রদ্ধা থেকেই প্রিয় নিসর্গীর নামে বাড়ির চারপাশেই ৪ একর জায়গা জমির মূল্য বাদে প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন দ্বিজেন শর্মা উদ্ভিদ উদ্যান। আর সেই উদ্যানের প্রতিটি বৃক্ষকে তাঁরা পরম যত্ন ও নিবিড় ভালোবাসায় নিজেদের সন্তানের মতোই পরিচর্যা করে থাকেন। আজ সেই উদ্যান ৬০০’র বেশি বৈচিত্র্যময় দুর্লভ গাছগাছালিতে সমৃদ্ধ।
দ্বিজেন শর্মা উদ্যানে রয়েছে, কানাইডিঙ্গা, বৈলাম, উরিআম, কুরচি, কন্যারি, মাইলাম, চালমুগরা, বাঁশপাতা, ডাকরুম, তাসবি, কেয়ামন, তুন, শিলবাটনা, গুটগুটিয়া, ট্রাম্পেট, কামদেব, রিটা, চিকরাশি, নাগালিঙ্গম, বাওবাব, কর্পূর, উদাল, কুম্ভি, ঢাকিজাম, তানপুরা, সিভিট, হিজল, তমাল, চাপালিশ, হলদু, আগর, শ্বেতচন্দন, রক্তচন্দন, বইট্টা গর্জন, কাইজেলিয়া, মহুয়া, জহুরী চাঁপা, কুসুম চাঁপা, সুলতান চাঁপা, কাঁঠালি চাঁপা, স্বর্ণ চাঁপা, নাগেশ্বর চাঁপাসহ চেনা এবং অসংখ্য বিরল গাছে ভরপুর এই উদ্যান। সেখানে বিদেশী ও স্থানীয় ফলদ বৃক্ষসহ আনুমানিক ৭ হাজার গাছপালা রয়েছে।
শুধু গাছই নয় এটি হয়ে উঠেছে বন্য পাখি, প্রজাপতি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের আশ্রয় কেন্দ্র।
উদ্যানটি গত ২০২২ সালের ৩০ মার্চ তৎকালীন বাংলা একাডেমির সভাপতি বরণ্যে কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এর উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হয়।
গাছ সংরক্ষণের পাশাপাশি হাসমত আলী প্রজাপতি সংরক্ষণে উদ্যানের মধ্যে গড়ে তুলছেন একটি প্রজাপতি পার্ক। এখানে রয়েছে প্রায় ১৫/২০ প্রজাতির কয়েক শত প্রজাপতি।
প্রজাপতির জন্য তিনি উদ্যানে রেখেছেন জবা, নয়নতারা, কসমস, টগর, রঙ্গন, অলকানন্দা, গাঁদা, জুঁই, করবী, মুসেন্ডা, মাধুরীলতা, কামিনী, লেবু, লিচু, কদম, এরিকাপাম, আশ শেওড়া, লজ্জাবতী, ঝুমকোলতা ও আঙুরলতার মতো গুল্মসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদ।
আর পাখির খাদ্যের জোগান দিতে তিনি রোপণ করেছেন অনেক ফলদ বৃক্ষ। পাশাপাশি যাতে উদ্যানের পাখিরা জলকেলি করতে পারে সেই জন্য গুল্মজাতীয় জলজ উদ্ভিদসহ খনন করেছেন দুটি জলাধার।
পাখিদের কলরব, ফুল ও ফলের সুবাসসহ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য এ দ্বিজেন শর্মা উদ্যান।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি তার উদ্যান চত্বরে স্বল্প পরিসরে একটি হারবেরিয়াম স্থাপন করেছেন। এখানে তিনি দুর্লভ উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করেন। বিশেষ করে বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ হারবেরিয়াম করে সংরক্ষণ করেছেন।
হাসমত আলী প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ এবং দুর্লভ উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য ডিভাইন কেয়ার ফাউন্ডেশনের ‘গ্রিন ক্লাইমেট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ অর্জন করেন। এ ছাড়াও তিনি বৃক্ষ গবেষণা, সংরক্ষণ, উদ্ভাবন বিভাগে জাতীয় পুরস্কার-২০২৩ লাভ করেন।
রবিউল