ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান থেকে আদর্শ কৃষক মানিক

আবু রাইহান, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ৪ মে ২০২৫

জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান থেকে আদর্শ কৃষক মানিক

ছবি: জনকণ্ঠ

একসময় ছিলেন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নিষ্ঠার সাথে দীর্ঘ পাঁচ বছর সফলতার সঙ্গে পালন করেছেন নিজের দায়িত্ব। নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও পেশিশক্তির ব্যবহার বাড়ায়, মাত্র এক মেয়াদ চেয়ারম্যান থাকার পর আর আগ্রহ দেখাননি নির্বাচনে। তবে এই সময়ের মধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে।

হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের মাগুর জোড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা পরিশ্রমী, উদ্যোমী কৃষক এমদাদুল হক মানিক তার কর্মদক্ষতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কৃষি খাতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হয়েও তিনি কৃষিকাজকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন।

ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি প্রবল ভালোবাসা ও আগ্রহ ছিল তার। চেয়ারম্যান থাকার সময়ও তিনি কৃষিকাজ চালিয়ে গেছেন এবং বিষমুক্ত, নিরাপদ আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার চেষ্টা করেছেন। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর পুরোপুরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে তিনি প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন এই কৃষি আবাদ। শুধু প্রচলিত কৃষি পদ্ধতিতেই থেমে থাকেননি, বরং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি জৈব সার ও বালাইনাশক ব্যবহার এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে উৎপাদন বাড়িয়েছেন। তার খামারে বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফলমূলসহ নানা ফসল চাষ করা হয়।

প্রথমে কৃষিকাজে নানা বাধার সম্মুখীন হলেও নিজের অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের ফলে তিনি সফলতা পান। তার উৎপাদিত কৃষিপণ্য স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিয়মিত কৃষি সম্পর্কিত উপদেশমূলক ভিডিও শেয়ার করে থাকেন। এতে কৃষিকাজে মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এবং আধুনিক ও নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদনে তার দেখানো পথ অনুসরণে এগিয়ে আসছে অনেক কৃষক।

মানিক চেয়ারম্যান প্রমাণ করেছেন, সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রম থাকলে কৃষি খাতেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। তার সাফল্যের গল্প নতুন প্রজন্মের কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

সাবেক চেয়ারম্যান এমদাদুল হক মানিক বলেন, “জনগণ আমাকে ভালোবেসে এক মেয়াদে চেয়ারম্যান বানিয়েছিল। পরবর্তী প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও পেশিশক্তির ব্যবহার বাড়ায় আর নির্বাচনমুখী হইনি। কৃষিকাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই বর্তমানে কৃষি নিয়েই আছি।

আমি আমার জমিতে বালাইনাশক হিসেবে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের জন্য শ্যাম্পু, সাবানের গুঁড়া, গুল, কেরোসিন তেল ও হলুদের গুঁড়া ব্যবহার করি, যা খুবই সহজলভ্য। ছত্রাকের জন্য বোর্দো মিক্সার হিসেবে তুঁতে ও চুন এবং ভাইরাসের জন্য পেঁয়াজের রস, রসুনের রস ইত্যাদি ব্যবহার করি। এছাড়া নিমপাতা, বিষকাটালির পাতা, মেহগনির বীজের রস ব্যবহার করি। যখন অতিরিক্ত ছত্রাক ও ভাইরাস ধরে, তখন জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করি। যেমন বায়ো-এনভির, বায়ো-এলিন ইত্যাদি।”

তবে তিনি স্থানীয় কৃষি অফিসের মাঠকর্মী নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে কৃষি অফিসের মাঠকর্মীকে কল করলে পাওয়া যায় না। কখনো খোঁজ নিতেও আসে না। তাই নিজে নিজেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনে-বুঝে কৃষিকাজ করে যাচ্ছি।”

স্থানীয় কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহনূর আলম অপু অভিযোগ অস্বীকার করলেও মুঠোফোনে তার সঙ্গে কথা হলে তার বক্তব্যে মেলে অসঙ্গতি। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় তার দায়িত্ব পালনে গাফিলতির বিষয়টি।

তিনি বলেন, “মানিক চেয়ারম্যান আনুমানিক ৪০ শতাংশ জমিতে ঝিঙা, করলা চাষ করেছেন।” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি করলা, ধুন্দুল, চালকুমড়া, শীতলাউ, ডাঁটা, পাটশাক ইত্যাদি চাষ করেছেন।

এম.কে.

×