ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশকে ঠেকাতে গিয়ে ব্যবসা বন্ধ, যেন খাল কেটে কুমির এনেছে ভারত!

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৪ মে ২০২৫

বাংলাদেশকে ঠেকাতে গিয়ে ব্যবসা বন্ধ, যেন খাল কেটে কুমির এনেছে ভারত!

ছবি: প্রতীকী

ভারত ও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের কথিত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ছায়াতেই লুকিয়ে ছিল বহু পুরনো ক্ষত। শেখ হাসিনার পতনের পর দুই দেশের সম্পর্কে শুরু হয়েছে ছন্দপতন। ভারত এখন ঢাকার বিরুদ্ধে কঠোর কৌশল গ্রহণ করেছে, আর ঢাকা পাল্টা জবাবে পিছিয়ে নেই। হিসেব-নিকেশ মিলিয়ে একের পর এক পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে উভয় দেশ।

সম্প্রতি ভারত হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রানজিট সুবিধা, যার মাধ্যমে তৈরি পোশাক রপ্তানি হতো ইউরোপ ও আমেরিকায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ বন্ধ করে দেয় ভারতীয় সুতা আমদানি। ফলে বাণিজ্যিক রুট কার্যত অচল, দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা এখন চরমে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের নেতৃত্বে আছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন সরকার পতিত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতির অভিযোগে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে। তবে দিল্লি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তা কখনোই সম্ভব নয়।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এই টানাপোড়েন সরাসরি প্রভাব ফেলছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের পক্ষ থেকে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধের অজুহাত হিসেবে বন্দর ও বিমানবন্দরের ভিড়ের কথা বলা হলেও এর পেছনে স্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।

উত্তরে বাংলাদেশ স্থলপথে ভারতীয় সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করে। এই পদক্ষেপ পোশাকশিল্পে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিকেই নাড়া দিচ্ছে। ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে কিছু মন্তব্য ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র সাগরগামী প্রবেশদ্বার বাংলাদেশ’এই বক্তব্যকে ভারতের কৌশলগত দুর্বলতা, তথা শিলিগুড়ি করিডরের প্রতি ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

সফরে তিস্তা নদীতে চীন-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগের ঘোষণা আরও জটিলতা তৈরি করেছে। ভারতের দৃষ্টিতে এটি একটি কৌশলগত হুমকি। এছাড়াও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্কোন্নয়নের প্রচেষ্টা দিল্লির কূটনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

মানুষে মানুষে সম্পর্কেও পড়ছে এই উত্তেজনার ছাপ। ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়ায় কঠোরতা আরোপের ফলে প্রতিদিন অনুমোদিত ভিসা সংখ্যা কমে গেছে ৮০ শতাংশের বেশি। চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা ও পর্যটনের জন্য প্রতিবছর ভারতে ভ্রমণকারী ২০ লক্ষাধিক বাংলাদেশির যাতায়াতে তৈরি হয়েছে সংকট। এর ফলে ভারতের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ছে।

দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে এই উত্তেজনা যদি দ্রুত প্রশমিত না হয়, তাহলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=TwQU3MQg75U

রাকিব

×