
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় ৭০ বছর আগে উত্থাপিত একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা অবশেষে সত্য প্রমাণিত হলো-আর এই অর্জন এসেছে ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন নিয়ে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউসি রিভারসাইড) একদল গবেষক।
১৯৫৮ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ রোনাল্ড ব্রেসলো ধারণা দেন, ভিটামিন বি১ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিপাক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় একটি বিশেষ আণবিক গঠন-কারবিন তৈরি করে। কিন্তু সমস্যা হলো, কারবিন অত্যন্ত অস্থির ও প্রতিক্রিয়াশীল একটি উপাদান যা পানির সংস্পর্শে সাথে সাথে ভেঙে পড়ে। তাই বিজ্ঞানীদের মতে, এটি পানিপূর্ণ মানবদেহে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
তবে ইউসি রিভারসাইডের গবেষক ভিনসেন্ট লাভালো ও তার সহকর্মীরা এখন প্রথমবারের মতো পানিতে একটি স্থিতিশীল কারবিন পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
"এই প্রথম কেউ পানিতে স্থায়ী কারবিন দেখতে পারলো," বলেন লাভালো। "অনেকেই মনে করতেন এটা একপ্রকার পাগলামি। কিন্তু দেখা গেল, ব্রেসলো ঠিকই বলেছিলেন।"
মূল সাফল্যের রহস্য হলো, গবেষকরা ল্যাবে এমন একটি ‘আর্মর’ বা সুরক্ষিত আণবিক কাঠামো তৈরি করেছেন, যা কারবিনকে ঘিরে ধরে তাকে পানিতে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করে। উচ্চ রেজোলিউশনের ইমেজিং প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা কারবিনের গঠন নিশ্চিত করেছেন।
এই সুরক্ষা কাঠামোর পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত রাসায়নিক পরিবর্তন করে গবেষকরা কারবিনকে ছয় মাস পর্যন্ত পানিতে স্থায়ী রাখতে সক্ষম হন। এই আবিষ্কার প্রমাণ করে, কারবিন বায়োলজিক্যালভাবেও সম্ভব-এবং ভিটামিন বি১ হয়ত এই গঠন নিয়েই দেহে কাজ করে।
আরও চমকপ্রদ বিষয় হলো, গবেষকরা মূলত প্রতিক্রিয়াশীল অণু নিয়ে গবেষণা করছিলেন, তারা সরাসরি ব্রেসলোর ধারণা প্রমাণের উদ্দেশ্যে কাজ করেননি। কিন্তু গবেষণার মধ্যেই মিলেছে এই যুগান্তকারী সত্য-যা আবারও প্রমাণ করলো, বিজ্ঞান কখনও কখনও আশ্চর্যজনক উপায়ে সত্য প্রকাশ করে।
গবেষকরা আরও বলছেন, কারবিনকে পানিতে স্থিতিশীল করতে পারলে এটি পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ রসায়নে’ বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে। বিষাক্ত দ্রাবকের বদলে পানি ব্যবহার করে ওষুধ ও জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব হতে পারে।
"পানি সবচেয়ে উপযুক্ত দ্রাবক-প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, বিষমুক্ত এবং পরিবেশবান্ধব," বলেন ইউসিএলএর রসায়নবিদ ভারুন রাভিপ্রোলু। "যদি শক্তিশালী ক্যাটালিস্টগুলোকে পানিতে কার্যকর করা যায়, তবে তা সবুজ রসায়নের দিকে বড় পদক্ষেপ।"
গবেষক লাভালো বলেন, "শুধু ৩০ বছর আগেও মানুষ ভাবতো এই ধরনের অণু তৈরি করাই সম্ভব নয়। এখন আমরা সেগুলো পানিতে বোতলবন্দি করতে পারছি। ব্রেসলো যেটা বলেছিলেন, সেটা শতভাগ ঠিক ছিল।"
এই সাফল্য বিজ্ঞানীদের সামনে আরও নতুন রাসায়নিক গঠন ও প্রতিক্রিয়াশীল উপাদান পর্যবেক্ষণের দুয়ার খুলে দিয়েছে। আর প্রমাণ করেছে-একটি ভালো ধারণা কখনও পুরোনো হয় না।
সূত্র: https://shorturl.at/LBOgZ
মিরাজ খান