
ছবি: সংগৃহীত
সকালে সঠিক পানীয় নির্বাচন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন বা প্রি-ডায়াবেটিক অবস্থায় আছেন, তাদের জন্য এমন পানীয় বেছে নেওয়া উচিত যা রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায় না এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এখানে ব্লাড সুগারের জন্য সকালের সেরা কয়েকটি পানীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. পানি:
কেন সেরা: পানির কোনো ক্যালোরি নেই এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা মোটেও প্রভাবিত করে না। পর্যাপ্ত পানি পান শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, কিডনিকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করে, যা পরোক্ষভাবে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কীভাবে পান করবেন: সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক বা দুই গ্লাস সাধারণ পানি পান করুন। চাইলে হালকা গরম পানি, লেবু পানি বা শসার স্লাইস মিশিয়ে পান করতে পারেন।
২. গ্রিন টি (Green Tea):
কেন সেরা: গ্রিন টিতে পলিফেনল এবং ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, বিশেষ করে এপিগ্যালোক্যাটেচিন গ্যালেট (EGCG), যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গ্রিন টি পান টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। এটি ক্যালোরি-মুক্ত এবং কার্বোহাইড্রেট কম।
কীভাবে পান করবেন: চিনি ছাড়া গ্রিন টি পান করুন। সকালে আপনার প্রথম পানীয় হিসেবে এটি বেছে নিতে পারেন।
৩. ব্ল্যাক কফি (Black Coffee) (চিনি ছাড়া):
কেন সেরা: চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা তেমন প্রভাবিত হয় না। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কিছু যৌগ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্ল্যাক কফি পান টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
কীভাবে পান করবেন: দুধ এবং চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি পান করুন। ক্যাফেইন সংবেদনশীলতা থাকলে অল্প পরিমাণে শুরু করুন।
৪. লেবু পানি:
কেন সেরা: লেবু পানিতে ক্যালোরি নেই এবং এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। লেবু সরাসরি রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় না, তবে এটি কার্বোহাইড্রেট হজমে সাহায্য করে এবং খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমাতে সহায়ক। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করতেও সাহায্য করে।
কীভাবে পান করবেন: এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে একটি অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে সকালে পান করুন। এতে কোনো চিনি যোগ করবেন না।
৫. ভেষজ চা (Herbal Teas):
কেন সেরা: কিছু ভেষজ চা, যেমন দারচিনি চা, আদা চা বা মেথি চা, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উপকারী হতে পারে।
দারচিনি: গবেষণায় দেখা গেছে, দারচিনি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
আদা: আদা প্রদাহ কমায় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে।
মেথি: মেথি বীজের নির্যাস রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পরিচিত।
কীভাবে পান করবেন: এই চাগুলো তৈরি করে চিনি ছাড়া পান করুন।
৬. সবুজ সবজির জুস (Green Vegetable Juice):
কেন সেরা: পালং শাক, শসা, সেলারি, ব্রোকলি বা করলার মতো সবজি দিয়ে তৈরি জুসে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার থাকে। এই জুসগুলোতে কার্বোহাইড্রেট খুব কম থাকে এবং ফাইবার হজম প্রক্রিয়া ধীর করে রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করে। করলার রস বিশেষভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পরিচিত।
কীভাবে পান করবেন: সকালে তাজা সবুজ সবজি দিয়ে জুস তৈরি করে পান করুন। এতে কোনো ফল (যেমন মিষ্টি ফল) যোগ না করাই ভালো, কারণ তাতে চিনির পরিমাণ বাড়তে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
চিনি পরিহার: যেকোনো পানীয়তে চিনি, মধু বা কৃত্রিম মিষ্টি যোগ করা থেকে বিরত থাকুন।
পরিমিত পান: যদিও এই পানীয়গুলো উপকারী, তবে কোনোটিই অতিরিক্ত পরিমাণে পান করা উচিত নয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি আপনার ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে, তবে যেকোনো নতুন খাদ্য বা পানীয় আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সকালে এই স্বাস্থ্যকর পানীয়গুলো গ্রহণ করে আপনি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং দিনটিকে সতেজভাবে শুরু করতে পারেন।
ফারুক