ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ভিন্ন কেন? সময়মতো না চিনলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ে

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৩:৪৭, ২৮ জুলাই ২০২৫

নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ভিন্ন কেন? সময়মতো না চিনলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ে

ছবি: সংগৃহীত।

পুরুষ ও নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ এক নয়-এমনকি এতটাই ভিন্ন হতে পারে যে অনেক সময় নারীদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের উপসর্গগুলো ভুলভাবে হালকা সমস্যা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। যেমন-অম্বল, ক্লান্তি বা মানসিক দুশ্চিন্তা বলে মনে হয়। অথচ, এটি হতে পারে জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সংকেত।

চেস্ট পেইন বা বুকের ব্যথা দুই পক্ষের ক্ষেত্রেই সাধারণ একটি লক্ষণ হলেও, নারীরা অনেক বেশি ‘অসাধারণ’ ও সূক্ষ্ম লক্ষণ অনুভব করে থাকেন। এর ফলে অনেক সময় রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা পেতে দেরি হয়।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন এবং মায়ো ক্লিনিকের গবেষণা বলছে, নারীদের হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা পাওয়া এবং জীবন বাঁচানোর হার এখনও পুরুষদের তুলনায় কম।

নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ যেগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত হয়:
মায়ো ক্লিনিক জানায়, নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সময় নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে:

গলা, চোয়াল, কাঁধ বা উপরের পিঠে ব্যথা, বমি ভাব বা বমি, মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো, অস্বাভাবিক ও অতিরিক্ত ক্লান্তি, এক বা দুই হাতে ব্যথা, ঘাম হওয়া বা হজমের সমস্যা।

এই লক্ষণগুলো অনেক সময় বুকের ব্যথার সঙ্গে যুক্ত নাও থাকতে পারে এবং তা ঘুম বা বিশ্রামের সময়ও দেখা দিতে পারে, যার ফলে এগুলোকে অন্য রোগ ভেবে অবহেলা করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কেন নারীদের উপসর্গ ভিন্ন?
নারীদের হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর গঠনে পুরুষদের সঙ্গে কিছু পার্থক্য থাকে। নারীরা "মাইক্রোভাসকুলার ডিজিজ" বা ছোট রক্তনালীর ব্লকেজে বেশি ভোগেন, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে বড় ধমনীতে সমস্যা বেশি হয়।

এছাড়া ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাব-বিশেষ করে মেনোপজের আগে ও পরে-নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ধরণ ও প্রতিক্রিয়া আলাদা করে তোলে।

যে ঝুঁকি-কারকগুলো নারীদের বেশি প্রভাবিত করে:
ধূমপান, মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা, ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন জটিলতা (যেমন: প্রি-এক্ল্যামসিয়া), অটোইমিউন রোগ (যেমন: লুপাস, স্ক্লেরোডার্মা), মেনোপজ।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ‘সাইলেন্ট’ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে, আর মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।

নারীরা চিকিৎসায় পিছিয়ে কেন?
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, নারীদের হৃদরোগ অনেক সময় অল্প গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারা তুলনামূলকভাবে কমবার পরিমাণে ডায়াগনস্টিক টেস্ট, অ্যাসপিরিন, স্ট্যাটিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সুবিধা পান। চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রচলিত ভুল ধারণা ও জেন্ডার পক্ষপাত এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে নারীদের যেসব বিষয় মেনে চলা জরুরি:

ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা, সুষম খাদ্য ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা, মেডিটেশন, সহায়তা গ্রুপ, রক্তচাপ, ব্লাড সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা,প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম।

মায়ো ক্লিনিক ও ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের মতে, এই অভ্যাসগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারে।

হঠাৎ বুকের চাপ বা অস্বস্তি, গলা বা হাতে ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট, বা অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করলে দেরি না করে দ্রুত জরুরি চিকিৎসা সহায়তা নিন। সময়মতো সাড়া দিলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।

সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মিরাজ খান

×