
ছবি: সংগৃহীত।
নারী প্রজনন অঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ডিম্বাশয়ে (ovary) যেসব ক্যানসার তৈরি হয়, তা-ই ওভারিয়ান ক্যানসার নামে পরিচিত। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই হালকা ও অস্পষ্ট হয় যে অনেক সময় সাধারণ শারীরিক অসুস্থতা বা পেটের সমস্যার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় রোগটি ধীরে ধীরে জটিল আকার ধারণ করে। তবে সচেতনতা ও সময়মতো লক্ষণগুলো চিনতে পারলে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয় শুরুতেই-যা রোগীর জন্য বাঁচার সম্ভাবনা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
চলুন জেনে নিই ওভারিয়ান ক্যানসারের এমন ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ যা অবহেলা করা উচিত নয়-
১. অবিরাম পেট ফাঁপা ও পেট ফুলে যাওয়া।
সাধারণত খাবারজনিত কারণে সাময়িকভাবে অনেকেরই পেট ফাঁপা হয়। কিন্তু ওভারিয়ান ক্যানসারে পেটের ফোলা ভাব বা চাপ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বাড়তে থাকে। এটি কেবল হরমোন বা খাদ্যজনিত নয়, বরং ডিম্বাশয়ে টিউমার এবং তাতে সৃষ্ট ফ্লুইড জমে পেটের অঙ্গগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করায় এমনটি ঘটে। যদি কয়েক সপ্তাহ ধরে পেট ফুলে থাকে বা অস্বাভাবিক ভারী লাগে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
২. খাবার খেতে না পারা বা দ্রুত পেট ভরে যাওয়া।
ওভারিয়ান ক্যানসারের আরেকটি আগাম লক্ষণ হলো অল্পতেই পেট ভরে যাওয়া বা খাওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলা। এতে অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস ঘটে। কারণ পেটে জমা তরল ও টিউমার পেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। নিয়মিত খেতে না পারা বা অল্প খেয়েই পেট ভরে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে তা অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
৩. পেলভিক বা তলপেটের ব্যথা ও চাপ।
এই ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ হলো তলপেটে বা পেলভিকে চাপ অনুভব করা কিংবা ব্যথা হওয়া। ব্যথাটি সাধারণ ঋতুকালের ব্যথা বা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার মতো নয়; বরং তা ক্রমাগত, তীব্রতর এবং পেছনের দিকে (lower back) ছড়িয়ে যেতে পারে। এটি ঘটে কারণ টিউমার আশপাশের নার্ভ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর চাপ সৃষ্টি করে। কয়েক সপ্তাহ ধরে নতুন ধরনের পেলভিক বা পেটব্যথা অনুভূত হলে তা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
৪. মূত্রত্যাগ ও মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন।
ওভারিয়ান ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রস্রাব ও পায়খানার স্বাভাবিক অভ্যাসেও পরিবর্তন দেখা যায়। রোগীরা বারবার প্রস্রাবের চাপ অনুভব করতে পারেন, অথচ অল্পই প্রস্রাব হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে অনিয়মিত মলত্যাগ, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে। পেটে জমা তরল ও টিউমার যখন মূত্রথলি বা অন্ত্রের ওপর চাপ ফেলে, তখন এসব পরিবর্তন দেখা দেয়। যদি দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই ধরনের সমস্যা চলতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
৫. অকারণ ক্লান্তি ও ওজন পরিবর্তন।
ওভারিয়ান ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপে অনেক নারীই অতিরিক্ত ক্লান্তি বা শক্তি হ্রাসের অভিজ্ঞতা অনুভব করেন, যা বিশ্রামের পরেও দূর হয় না। দৈনন্দিন কাজকর্মে আগের মতো উৎসাহ বা শক্তি পাওয়া যায় না। এর সঙ্গে ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি-দুটিই হতে পারে। শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এবং খাওয়ার রুচি কমে যাওয়ার কারণে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
অন্যান্য সম্ভাব্য আগাম উপসর্গ: সহবাসের সময় ব্যথা, মেনোপজের পর অস্বাভাবিক রক্তস্রাব, হজমে সমস্যা, বমি বমি ভাব বা পেট খারাপ, হঠাৎ নতুন করে পিঠব্যথা শুরু হওয়া।
উল্লেখিত উপসর্গগুলো যদি ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে, এবং আপনার জন্য এগুলো অস্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে বিলম্ব না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান