
ছবি: সংগৃহীত
রোববার রাত আটটা। ঢাকাময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের হোসেন মার্কেট এলাকায় ঘটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে রাস্তার পাশের একটি উন্মুক্ত ম্যানহোলে পড়ে গিয়ে মুহূর্তেই নিখোঁজ হন এক নারী।
স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। কিন্তু প্রচণ্ড পানির স্রোত ও অন্ধকারের কারণে ব্যর্থ হয়ে তারা খবর দেন ফায়ার সার্ভিসকে।
রাত দেড়টা পর্যন্ত চলে উদ্ধার অভিযান। কিন্তু টানা বৃষ্টি ও স্রোতের কারণে অভিযান স্থগিত করতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস। পরদিন, সোমবার সকাল ৮টায় পুনরায় শুরু হয় অনুসন্ধান।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ম্যানহোলটি অন্তত ১০ ফুট গভীর এবং বৃষ্টির ফলে পানির প্রবাহ ছিল অত্যন্ত তীব্র। সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় আশপাশের ড্রেনের ঢাকনা খুলে তল্লাশি চালানো হয়।
উদ্ধার অভিযানের এক সদস্য বলেন,
“আমরা যেখান থেকে নারীটি নিখোঁজ হয়েছেন, সেই জায়গা থেকে শুরু করে শেষ চেম্বার পর্যন্ত অন্তত দুইবার সার্চ করেছি। কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টি ও স্রোতের কারণে কাজ করা ছিল খুবই কঠিন। আমরা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাব উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরেই ম্যানহোলটি ঢাকনাবিহীন অবস্থায় ছিল। বহুবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
একজন স্থানীয় বলেন,
“যখন পানি থাকে তখন বোঝা যায় না কোন জায়গায় স্লাব আছে, আর কোন জায়গায় নেই। এতে যে কেউ পড়তে পারে। এটা স্পষ্ট গাফিলতি।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এটি তাদের দায়ভারের বাইরে। তারা বলেন, এটি সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব।
তবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মহাসড়কের পাশের এই ড্রেনটি বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের আওতায়। যেহেতু প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি, তাই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তারা বুঝে নেয়নি।
একজন কর্মকর্তা বলেন—
“এটা সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত না। এটি বিআরটি প্রকল্পের ড্রেন এবং এখনো আমাদের হ্যান্ডওভার করা হয়নি।”
এদিকে নিখোঁজ নারীকে ফারিয়া তাসনিম জ্যোতি বলে শনাক্ত করছেন তার স্বজন ও সহকর্মীরা। তারা জানান, ঘটনার সময় জ্যোতি ওই এলাকাতেই কাজের সূত্রে ছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
তার এক আত্মীয় জানান— “আটটার পর থেকে ফোন বন্ধ। পরে আমাদের সিসিটিভি ফুটেজ ও সহকর্মীদের ভিডিও দেখে নিশ্চিত হই যে এটা আমার বোনই হতে পারে।”
সহকর্মীরাও জানান, তিনি হাসপাতালে যাওয়ার কথা বললেও সেখানে পৌঁছাননি। নিচে নেমে দেখেন জ্যোতিকে পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার মোবাইলও বন্ধ।
এই দুর্ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে—এমনই দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। তাদের আহ্বান, অবহেলা ও দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া বন্ধ করে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি নগর ব্যবস্থাপনার চরম অব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিতার অভাবের প্রতিচ্ছবি। আরেকটি মূল্যবান জীবন হারিয়ে না যাক—এটাই এখন সকলের প্রার্থনা।
ছামিয়া