ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ধীরে ধীরে বাড়ছে ইউরিক অ্যাসিড! এই ৭টি লক্ষণই হতে পারে সতর্ক সংকেত!

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৫, ২৮ জুলাই ২০২৫

ধীরে ধীরে বাড়ছে ইউরিক অ্যাসিড! এই ৭টি লক্ষণই হতে পারে সতর্ক সংকেত!

বর্তমান সময়ে অল্প বয়সী অনেক মানুষের মধ্যেই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলা হয় হাইপারইউরিকেমিয়া। এই সমস্যা তখনই দেখা দেয়, যখন শরীরে ইউরিক অ্যাসিড অতিরিক্ত পরিমাণে তৈরি হয় অথবা শরীর থেকে তা সঠিকভাবে বের হয় না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চমাত্রা প্রাথমিক পর্যায়ে খুব একটা লক্ষণ প্রকাশ করে না, ফলে অধিকাংশ সময় এটি অজান্তেই শরীরে ক্ষতি করতে থাকে।

দীর্ঘ সময় ধরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকলে এর প্রভাব অত্যন্ত কষ্টকর হতে পারে। এটি গেঁটে বাত, কিডনিতে পাথর এবং ধীরে ধীরে জয়েন্ট ও কিডনি নষ্টের মতো জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

অনেকেই জানেন না, ইউরিক অ্যাসিড শরীরে তৈরি হয় পুরিন নামক একটি যৌগ ভাঙার ফলে। এই পুরিন পাওয়া যায় লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ ও অ্যালকোহল জাতীয় খাবারে। তাই এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হলে সময়মতো সতর্ক হওয়া জরুরি। দেহে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে যে প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সেগুলো চিনে রাখলে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

চলুন জেনে নিই এমন ৭টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ সম্পর্কে, যা ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক সতর্ক সংকেত হতে পারে।

১. হঠাৎ জয়েন্টে ব্যথা (বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙুলে)
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণ হলো হঠাৎ তীব্র জয়েন্ট ব্যথা, যা সাধারণত পায়ের বুড়ো আঙুলে দেখা যায়। এটি গেঁটে বাতের একটি স্পষ্ট লক্ষণ। ব্যথাটি সাধারণত রাতে হয়, তীব্র ও ধারালো প্রকৃতির এবং এর সঙ্গে লালচে রঙ, ফুলে যাওয়া বা স্পর্শে ব্যথা থাকতে পারে। কারণ, ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিকাকারে জয়েন্টে জমে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। যদিও সাধারণত পায়ের বুড়ো আঙুলে হয়, তবে এটি গোড়ালি, হাঁটু কিংবা আঙুলেও দেখা দিতে পারে।

২. জয়েন্টে ফোলা ও লালচে ভাব
গেঁটে বাতের আরও একটি লক্ষণ হলো জয়েন্টের চারপাশে হালকা ফুলে যাওয়া, গরমভাব কিংবা লালচে ভাব। যদিও ব্যথা সবসময় তীব্র হয় না, তবে হালকা প্রদাহও ইউরিক অ্যাসিড জমার প্রাথমিক সংকেত হতে পারে। এমনকি জয়েন্ট শক্ত লাগতে পারে বা চকচকে দেখাতে পারে।

৩. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
কোনো কারণ ছাড়াই যদি আপনি অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করেন, তবে তা হতে পারে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণে। শরীরে ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিক জমে দীর্ঘমেয়াদে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা শক্তি হ্রাস করে দেয়। আপনি যদি পর্যাপ্ত ঘুমের পরও সারাদিন ক্লান্ত থাকেন, সেইসঙ্গে জয়েন্টে অস্বস্তি অনুভব করেন, তাহলে ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা করা জরুরি।

৪. ঘন ঘন প্রস্রাব কিংবা প্রস্রাবে পরিবর্তন
রাতে বারবার প্রস্রাবের বেগ আসা কিংবা প্রস্রাবে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে তা হতে পারে কিডনির অতিরিক্ত চাপের ইঙ্গিত, যা ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে কাজ করছে। প্রস্রাব যদি ঘোলা, দুর্গন্ধযুক্ত, গাঢ় রঙের হয় বা রক্ত দেখা যায়, তাহলে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৫. মাংসপেশিতে শক্তভাব
সকালে ঘুম থেকে উঠেই যদি মাংসপেশিতে টান বা শক্তভাব অনুভব করেন, তবে সেটিও হতে পারে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির প্রভাব। যদিও এটি জয়েন্ট ব্যথার মতো তীব্র নয়, তবে এটি শরীরের নমনীয়তা কমিয়ে দৈনন্দিন চলাফেরায় অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

৬. ত্বকে সমস্যা বা খোসপাঁচড়া
কখনো কখনো ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিক ত্বকের নিচে জমে গিয়ে চুলকানি, খোসপাঁচড়া বা খোসা উঠার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে যাদের গেঁটে বাত রয়েছে, তাদের ত্বকে শক্ত গাঁটের মতো দানা (টোফাই) তৈরি হতে পারে। যদিও এটি বেশি উন্নত পর্যায়ের সমস্যা, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ত্বক শুষ্ক বা অস্বস্তিকর হয়ে উঠলেও সতর্ক হওয়া উচিত।

৭. হালকা জ্বর ও অস্বস্তি
দেহে ইউরিক অ্যাসিড বেশি হলে মাঝে মাঝে হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে। এটি মূলত প্রদাহজনিত কারণে হয়। অনেক সময় এই জ্বরের সঙ্গে জয়েন্টে ফোলাভাব, ব্যথা বা শরীর ম্যাজম্যাজে ভাবও থাকতে পারে। ইনফেকশন বা ফ্লুর লক্ষণ ছাড়াই যদি আপনি অসুস্থ বোধ করেন, তাহলে ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।


ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ সমস্যার মতো মনে হতে পারে। কিন্তু এগুলোর প্রতি সচেতন নজর না দিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ জটিলতায় পড়তে হতে পারে। তাই শরীরের এই সতর্ক সংকেতগুলো অবহেলা না করে যথাসময়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করাই সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/5xks78vs

আফরোজা

×