
রজোনিবৃত্তির পর নারীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা যেমন বাড়ে, তেমনি ওজন বৃদ্ধির কারণে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সহযোগী প্রতিষ্ঠান International Agency for Research on Cancer (IARC) পরিচালিত এক গবেষণায় এই নতুন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৫ কেজি প্রতি বর্গমিটার (kg/m²) বডি মাস ইনডেক্স (BMI) বৃদ্ধিতে হৃদরোগে আক্রান্ত নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ৩১% বেড়ে যায়। অথচ যাঁরা হৃদরোগে আক্রান্ত নন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বাড়ে ১৩%।
ওজন, হৃদরোগ এবং স্তন ক্যানসারের সংযোগ
গবেষকরা ইউরোপের প্রায় ১.৭ লাখ নারীর ওপর দুটি দীর্ঘমেয়াদি সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করেন। গবেষণার সময় এসব নারীর গড় বয়স ছিল ৬০ বছর। কারও আগে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা স্তন ক্যানসারের ইতিহাস ছিল না।
গবেষণায় দেখা যায়, রজোনিবৃত্তির পর শরীরে উৎপন্ন অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন এবং অতিরিক্ত ফ্যাট টিস্যু থেকে নির্গত হরমোন যেমন লেপ্টিন — এসবই স্তনে কোষ বিভাজনের হার বাড়িয়ে স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ায়।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে American Cancer Society-এর সাময়িকী Cancer-এ।
হৃদরোগের প্রভাব কেন ভয়াবহ?
গবেষণার প্রধান ড. হেইঞ্জ ফ্রাইসলিং বলেন, “বেশি ওজন শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং হরমোন ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। এসবই হৃদরোগ ও স্তন ক্যানসার উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ।”
তিনি আরও জানান, লেপ্টিন নামক হরমোন স্তন টিস্যুতে কোষ বিভাজন বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দমন করে। এই মিশ্র প্রতিক্রিয়াই ক্যানসার প্রবণতা বাড়াতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়: বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
মার্কিন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ক্রিস্টোফার বার্গ বলেন, “হৃদরোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করলে তা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও কমাতে পারে।”
তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী:
-
প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার শারীরিক ব্যায়াম করুন
-
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলুন
-
ড্যাশ বা মেডিটারেনিয়ান ধরনের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
অপরদিকে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ড. ভাবনা পাঠক জানান, শুধু ব্যায়াম নয়, পেশী বৃদ্ধির জন্য স্ট্রেন্থ ট্রেনিং এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক ডায়েটও গুরুত্বপূর্ণ।
এই গবেষণা আরও একবার মনে করিয়ে দিল—রজোনিবৃত্তির পর নারীদের শরীরে ওজন ও হৃদরোগ শুধু হৃদস্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করে না, স্তন ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগেরও ঝুঁকি বাড়ায়। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শরীরচর্চা এবং সুষম খাদ্যগ্রহণের বিকল্প নেই
Jahan