
মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ আরও একধাপ বেড়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় মানুষের বীর্য ও নারীদের ডিম্বাণুর চারপাশের তরলে (follicular fluid) মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষণাটি মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান রিপ্রোডাকশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজির বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়।
স্পেনের নেক্সট ফার্টিলিটি মুরসিয়ার গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ১৮ জন পুরুষ ও ২৫ জন নারী। ফলাফলে দেখা যায়, ৬৯% ফোলিকুলার ফ্লুইড ও ৫৫% বীর্য নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ড. এমিলিও গোমেজ-সানচেজ বলেন, “মানব প্রজনন তন্ত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি অনুমেয় ছিল। তবে বিস্তৃত মাত্রায় পাওয়াটা আমাদের বিস্মিত করেছে।”
কীভাবে শরীরে ঢুকছে প্লাস্টিক?
মাইক্রোপ্লাস্টিক মূলত তিনটি পথে শরীরে প্রবেশ করে: খাবার গ্রহণ, শ্বাসের মাধ্যমে এবং ত্বকের সংস্পর্শে। একবার রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করলে এটি শরীরের যেকোনো অংশে পৌঁছাতে পারে, এমনকি প্রজনন অঙ্গেও।
কোন ধরনের প্লাস্টিক পাওয়া গেছে?
গবেষণায় নয় ধরনের প্লাস্টিক শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ছিল:
-
পলিআমাইড (নাইলন)
-
পলিইউরেথেন (ফোম, আসবাব ও রঙে ব্যবহৃত)
-
পলিইথিলিন ও পলিপ্রোপিলিন (প্যাকেজিং ও খেলনায়)
-
পলিটেট্রাফ্লুরোইথিলিন (ননস্টিক কুকওয়্যারে ব্যবহৃত)
-
পলিভিনাইল ক্লোরাইড (PVC)
-
PLA (ফুড প্যাকেজিং ও 3D প্রিন্টিংয়ে)
স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
বর্তমানে গবেষণাটি প্রাথমিক পর্যায়ের, এবং এতে তাত্ক্ষণিক স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রমাণ মেলেনি। তবে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে এটি প্রজননক্ষমতা, হরমোন ভারসাম্য ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু প্লাস্টিকের উপাদান ক্যানসার, হরমোন ব্যাধি ও চর্মরোগের সঙ্গেও যুক্ত।
কী করা যায়?
ব্যক্তিগতভাবে আপনি চাইলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেন:
-
প্লাস্টিক বোতলের পানি কম পান করুন
-
প্লাস্টিকে গরম খাবার বা মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
-
গ্লাস, স্টিল বা বাঁশের পাত্রে খাবার সংরক্ষণ করুন
-
অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন
-
প্লাস্টিক কাটিং বোর্ড ব্যবহার কমান
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহারে বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ইউনাইটেড নেশনে আলোচিত ‘গ্লোবাল প্লাস্টিকস ট্রিটি’-তে উৎপাদনের ওপর একটি বৈশ্বিক সীমা নির্ধারণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গবেষণায় প্রজনন তরলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও এটি এখনই গর্ভধারণ বা সন্তান ধারণে সরাসরি প্রভাব ফেলছে এমনটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এটি যে প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তার নতুন মাত্রা তৈরি করেছে, তা স্পষ্ট।
Jahan