ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

একই কথা বারবার বলছেন? সতর্ক হোন-এটা হতে পারে মানসিক রোগের লক্ষণ

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৫ মে ২০২৫

একই কথা বারবার বলছেন? সতর্ক হোন-এটা হতে পারে মানসিক রোগের লক্ষণ

সংগৃহীত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং American Psychiatric Association-এর DSM-5 গাইডলাইন অনুসারে, এ ধরনের পুনরাবৃত্তিমূলক কথা বলা মানসিক রোগের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। এছাড়া

National Institute of Mental Health (NIMH) এবং Bangladesh Association of Psychiatrists (BAP)-এর তথ্য অনুযায়ী, এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা গ্রহণ করা উচিত।
 
বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য এখন একটি গুরুত্ববহ জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে সিজোফ্রেনিয়া, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার (OCD), বিষণ্নতা ও উদ্বেগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায়শই এক ধরনের অসচেতনভাবে একই শব্দ বা বাক্য বারবার বলার প্রবণতা*দেখা যায়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এ আচরণকে চিহ্নিত করেন “পার্সিভারেশন” অথবা

“অবসেশনাল থিঙ্কিং” হিসেবে যা মানসিক অসুস্থতার একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা সারাদিন ধরেই কিছু নির্দিষ্ট বাক্য বা শব্দ বারবার উচ্চারণ করতে পারেন। বাংলাভাষী রোগীদের মধ্যে এই ধরনের কথাবার্তার উদাহরণগুলো হলো:

  • “আমি ঠিক আছি?”
  • “সব মিথ্যে”
  • “আমি পাপ করেছি”
  • “আমার কিছু হবে না তো?”
  • “ওরা আমার পেছনে লেগেছে”
  • “সব শেষ হয়ে গেছে”
  • “আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন”
  • “তুমি আমাকে খুন করতে চাও”

এই পুনরাবৃত্তিমূলক কথাবার্তা বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক উপসর্গের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে — যেমন হ্যালুসিনেশন, ডিলিউশন, আতঙ্ক, অপরাধবোধ, অবসেসিভ চিন্তা বা অতীত ট্রমার প্রতিক্রিয়া। OCD রোগীরা যখন কোনো এক চিন্তায় আটকে যান, তখন তারা এক ধরনের মানসিক মুক্তির আশায় একই কথা পুনরাবৃত্তি করেন। অন্যদিকে, সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা ভ্রান্ত বিশ্বাস ও কল্পিত ভয় থেকে এমন আচরণে লিপ্ত হন।

কেন অবহেলা করা ঠিক নয়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), American Psychiatric Association-এর **DSM-5**, এবং National Institute of Mental Health (NIMH)-এর গবেষণা অনুযায়ী, এসব লক্ষণ মানসিক রোগের জটিল রূপে পরিণত হতে পারে যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সাইকিয়াট্রিস্টস (BAP)-এর তথ্যমতে, এই ধরনের পুনরাবৃত্তিমূলক কথা ও আচরণ শুধু প্যাথলজিক্যাল লক্ষণ নয় বরং তা রোগীর মস্তিষ্কের অর্গানিক বা কেমিক্যাল ভারসাম্যহীনতারও পরিচায়ক।

করণীয় ও সহায়তা:

  • প্রশিক্ষিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া
  • সঠিক ওষুধ প্রয়োগ ও নিয়মিত সঠিক চিকিৎসা
  • সাইকোথেরাপি, বিশেষ করে "Cognitive Behavioral Therapy (CBT)"
  • পরিবারের পক্ষ থেকে সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতামূলক আচরণ

বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন  রোগীকে কখনোই “অদ্ভুত” বা “পাগল” বলে উপেক্ষা করা উচিত নয়। বরং বোঝার চেষ্টা, সহানুভূতি, ও নিরাপদ পরিবেশ তাকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের অন্যতম চাবিকাঠি।

একটি সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা যত বেশি, সেই সমাজ ততটাই সুস্থ ও মানবিক। মানসিকভাবে অসুস্থ কারও পুনরাবৃত্তি কথা শুনলে অবজ্ঞা নয়, বরং সহযোগিতা ও বোঝার মনোভাবই হোক আমাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া।

হ্যাপী

×