ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে-২০২৫

সুস্থ দেহ ও মনের জন্য মুখের যত্ন নিন

ডা. মো. ফারুক হোসেন

প্রকাশিত: ১৬:২০, ১৭ মার্চ ২০২৫

সুস্থ দেহ ও মনের জন্য মুখের যত্ন নিন

সারা বিশ্ব প্রতি বছর ২০ মার্চ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে একযোগে পালিত হয়। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য জনগণকে সচেতন করে তোলা যেন মুখের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ২০২৪ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে এর ক্যাম্পেন থিম বা প্রচারনার বিষয় “আ হ্যাপি মাউথ...ইজ আ হ্যাপি বডি” অর্থাৎ সুস্থমুখে সুস্থশরীর। সুস্থমুখ কেবলমাত্র স্লোগান নয় বরং এটি জীবনের চলার একটি দিক নির্দেশনা যা আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। সেই ধারাবাহিকতায় ওয়ার্ল্ড ডেন্টাল ফেডারেশন (এফডিআই) ২০২৫ সালে ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে ‘অ যধঢ়ঢ়ু সড়ঁঃয রং ধ যধঢ়ঢ়ু সরহফ’ অর্থাৎ সুস্থমুখে সুস্থমন। মুখের স্বাস্থ্যের সঙ্গে মানসিক সুস্থতার যোগসূত্র রয়েছে। স্বাস্থ্যবান মুখ হলো স্বাস্থ্যবান শরীরের প্রতিচ্ছবি। একটি স্বাস্থ্যবান মুখ আপনার আত্মবিশ^াস বৃদ্ধি করে। মানসিক উন্নতির জন্য মুখের যত্ন নিতে হবে। আপনার যদি মুখে যন্ত্রণাদায়ক রোগ থাকে, আঁকাবাঁকা দাঁত থাকে অথবা মুখের কারণে আপনাকে দেখতে ভালো লাগে না তাহলে সেটি আপনার মনের ওপর প্রভাব ফেলবে। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আপনি মন খুলে হাসতে পারবেন না, কথা বলতে পারবেন না। এক কথায় আপনি মানসিকভাবে ভিতর থেকে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়বেন। তাই সুস্থমুখ সুস্থমন মানসিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
আপনার মুখের স্বাস্থ্যকে কখনোই আপনি বাকি শরীর থেকে আলাদা করতে পারবেন না। হৃদরোগ ইতোমধ্যেই শীর্ষ ঘাতক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা মাড়ি রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি জরিপে দেখা গেছে, মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার বা টিউমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাড়ি রোগের মাধ্যমে যদি ব্যাকটেরিয়া ‘ভিরিড্যানস স্ট্রেপটোকক্কাই’ রক্ত প্রবাহে সংক্রমিত হয় তাহলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো লিভারের রোগের সঙ্গে পেরিওডন্টাল রোগের যোগসূত্র রয়েছে। পেরিওডন্টাইটিসের সঙ্গে লিভারের রোগ নন অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা বা ক্যান্সারের যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায়। শিশুদের  ক্ষেত্রে ক্রনিক লিভার ডিজিজে দাঁত ও মাড়িতে সবুজ দাগ এবং এনামেল হাইপোপ্লাসিয়া দেখা যেতে পারে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস মুখের অভ্যন্তরে জেনিটাল ওয়ার্টস বা গোটার সৃষ্টি করে থাকে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে মুখের ক্যান্সার এবং সারভাইক্যাল ক্যান্সার হতে পারে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস টাইপ-১৬ কে মুখের ক্যান্সারের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে গন্য করা হয়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেয়েদের মাসিকের সময় মুখে আলসার এবং জ্বালাপোড়া হতে পারে। আবার মাসিক বন্ধ হয়ে গেলেও মেনোপজের সময়ও মুখে আলসার বা ক্ষত দেখা দিতে পারে। ডাউন সিনড্রোমের শিশুদের জন্মের সময় জিহ্বায় ফুলা ভাব থাকতে পারে। হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের কারণে মুখে ও ঠোঁটে বারবার জ্বরঠোসা ও ক্ষত দেখা দিতে পারে। যাদের প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই মুখে নানাবিধ আলসার বা ঘাঁ দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিডের অভাব হলে ঠোঁট কাটা ও তালুকাটা শিশু জন্মগ্রহণ  করতে পারে। মাড়ি রোগ থাকলে গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। প্রি-ম্যাচিউর বেবী জন্ম নিলে বাচ্চার ওজন কম হবে, শ^াসকষ্ট হবে, শিশু কানে কম শুনতে পারে, শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যেহেতু শিশুর হাইপোথ্যালামাস এর গঠন তখনো ঠিকভাবে হয় না। মাড়ি রোগের কারণে কারও কারও ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবরশন হতে পারে। অথচ গর্ভকালীন সময়ে শুধু গর্ভবতী মায়ের ভালোভাবে দাঁতের স্কেলিং করিয়ে নিলে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ ক্ষেত্রে মাড়ি রোগজনিত কোন জটিলতা দেখা দেবে না।
মুখের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য কখনোই ভালো রাখা সম্ভব নয়। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রাখলে বিভিন্ন ধরনের সিস্টেমিক রোগ থেকে শুরু করে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যার কারণে আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাই আপনার দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন লাভ ও হাসিখুসি মানসিক জীবনের জন্য আপনার মুখের যত্ন নিন। হাসি আপনাকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আর সুস্থমুখ সুন্দর হাসির সৃষ্টি করে, মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে।

লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার, বর্ণমালা সড়ক,
ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
ই-মেইল : [email protected]

×