ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র
‘ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র’ কোনো একক রোগ নয়, এটা হলো অনেক রোগের সমন্বয়। আগে বয়স্কদের এটা হতো বলে সবাই জানে। তবে এখন, বাচ্চাকাল ও মধ্যবয়সী অনেকের মধ্যে রোগটির প্রকোপ বেড়েছে। সময় থাকতে যদি রোগটি সম্পর্কে জানা যায় তাহলে খুব সহজেই পরিত্রাণ সম্ভব।
যখন কোনো ব্যক্তির অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির আইলেটস্ অব ল্যাঙ্গারহ্যানস্ কোষ পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা ইনসুলিন উৎপাদনে সাড়া দেয় না; উপরন্তু রক্তের গ্লুকোজ বাড়তেই থাকবে তখন সেটির কারণে, যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তা হলো ‘রক্তে উচ্চমাত্রায় গ্লুকোজ’। তখনো সেটিকে ডায়াবেটিস বলা যাবে না!
একটা সাজেশন হলো, বাসায় গ্লুকোমিটার রাখবেন যদি আপনার বাসায় ডায়াবেটিস রোগী থাকে বা আপনার ওজন আদর্শ ওজনের থেকে বেশি হয়ে থাকে।
আগেই বলেছি, ডায়াবেটিস হলো অনেক রোগের সমন্বয়। এরপর, ধরুন আপনার সকালে খালি পেটে ‘ভধংঃরহম ঢ়ষধংসধ মষঁপড়ংব’ এলো ৬.১ মিলিমোল/লি. ৭ মিলিমোল/ লি. এই ক্ষেত্রে বলব, আপনি প্রি-ডায়াবেটিস অর্থাৎ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্মুখ ঝুঁকিতে আছেন; তবে চেষ্টা করলে এখনো এটা থেকে বিরত থাকা সম্ভব।
আবার যদি আপনার সকালে খালি পেটে ‘ভধংঃরহম ঢ়ষধংসধ মষঁপড়ংব’ এলো ১৫.৫ মিলিমোল/ লি. খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ‘ঢ়ষধংসধ মষঁপড়ংব’ এলো ২৬ মিলিমোল/লি.
এ ক্ষেত্রে বলব, আপনার ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত এবং আপনার অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। তাহলে আপনার আইডিয়াল ভ্যালুটা জানতে হবে এবং সেটি হলো :
খালি পেটে ‘fasting plasma glucose’ - ৭ মিলিমোল/লি এর থেকে বেশি অথবা সমান; খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ‘plasma glucose’- ১১ মিলিমোল/ লি এর বেশি অথবা সমান।
ক্স এখন, হাইপোগ্লাইসেমিয়া মানে কি?
যখন প্লাজমা গ্লুকোজ ৩ এর থেকে বেশি, তবে ৩.৯ এর থেকে কম হবে তখন ‘লেভেল ১ হাইপোগ্লাইসেমিয়া’ বলে। এ সময় হালকা ঘাম, ক্ষুধা আর চিন্তিত লাগতে পারে রোগীকে।
যখন প্লাজমা গ্লুুুকোজ ৩ এর থেকে কমে যায় তখন সেটাকে বলে ‘লেভেল ২ হাইপোগ্লাইসেমিয়া’। এ সময় বুক ধড়ফড়, অত্যধিক ঘাম, হাত-পা কাঁপতে থাকা, বমি, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি দেখা দেয়।
যখন প্লাজমা গ্লুকোজ ২ এর অনেক নিচে নেমে যায় তখন সেটিকে ‘লেভেল ৩ হাইপোগ্লাইসেমিয়া’ বলে। এ অবস্থায় রোগী বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারে, গোলমাল পাকাতে পারে, ঘোড়ে চলে যেতে পারে, উল্টাপাল্টা বলবে বা, কথা বলতে পারবে না, হাঁটাচলা করতে পারবে না।
ক্স হাইপোগ্লাইসেমিয়া কেন হয়?
হাইপোগ্লাইসেমিক হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ না জানলেই নয়Ñ খাবারে অনিয়ম করলে, দুপুরের খাবার সন্ধ্যায় খেলে, ইনসুলিন বা ডায়াবেটিস এর ওষুধের ডোজ অত্যধিক কম বা অত্যধিক বেশি হলে, ঘুমানোর আগে অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করলে, ইনসুলিনের ডোজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শর্করা ও প্রোটিন জাতীয় খাবার না খেয়ে ডায়েট করলে, মদ্যপান করলে!
একটু সচেতন থাকলেই কিন্তু হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়; আশা করি, আপনারা পড়ে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। আর ডায়াবেটিস তো একদিনে শেষ হওয়ার নয়, তাই এই বিষয়ে আরও জানতে চোখ রাখুন আপনার ডাক্তার পাতায়।
লেখক: ৫ম বর্ষ এমবিবিএস; শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর।