ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ডেঙ্গুতে একদিনে রেকর্ড ১৩ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ১৮ জুলাই ২০২৩; আপডেট: ২০:০৫, ১৮ জুলাই ২০২৩

ডেঙ্গুতে একদিনে রেকর্ড ১৩ জনের মৃত্যু

হাসপাতালে ভর্তি

  • জটিল হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি
  • সারাদেশে ছড়িয়েছে রোগী

এতদিন আক্রান্তের রেকর্ড ছাড়াচ্ছিলো। এবার প্রতিদিনই ছাড়াচ্ছে মৃত্যুর রেকর্ডও। প্রতিদিনই ভয়াবহ হয়ে উঠছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। শুধু রাজধানী নয় সারাদেশেই পাওয়া যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগী।

সোমবার সকাল ৮ থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ জন। এসময় নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৩৩ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৭৯ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫৪ জন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গুর ধরণ এবং লক্ষণ পরিবর্তন হওয়ায় বাড়ছে মৃত্যু বলে মত তাদের। এমন অবস্থায় জ্বর ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র  পেয়েছেন ১ হাজার ৩৯২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬৭৪ জন এবং ঢাকার বাইরের ৭১৮ জন। অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৩ জনের মধ্যে ঢাকার ৯ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলের ৮ জন রয়েছেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে মোট সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ১৮ হাজার ৩০৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ১১ হাজার ৯৩৭ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৬ হাজার ৩৬৭ জন। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫ হাজার ৫৬৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৪৪৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ২ হাজার ১২৬ জন।চলতি বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৪ হাজার জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৫ হাজার ৪৭৬ জন এবং ঢাকার বাইরের রয়েছেন ৮ হাজার ৫২৪ জন।

চিকিৎসকরা বলছেন, সম্প্রতি ডেঙ্গুর লক্ষণে পরিবর্তন এসেছে। তাদের মতে ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক লক্ষণগুলো আগে যেমন ছিল, এখন তা পাল্টেছে। আগে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো ছিল, শুরুতেই জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা,  চোখের পেছনে ব্যথা, চামড়ায় লালচে দাগ। কিন্তু সম্প্রতি ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে প্রায় সময় জ্বর আসছে না, প্রাথমিক পর্যায়েই ডায়ারিয়া ও শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, বমি, পেটে-বুকে পানি আসা, শরীরে খিঁচুনি দেখা যাচ্ছে।

ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সচেতনতামূলক পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়, ডেঙ্গু জ্বর কমে গেলে অবহেলা না করে অবশ্যই পরবর্তী জটিলতা এড়াতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয় পরামর্শ দিয়েছে, জ্বরের শুরুতে অবশ্যই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। এছাড়া দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করার জন্যও বলেছে মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, বাসার ভেতর ও চারপাশে, নির্মাণাধীন ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ভবনের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি অপসারণ করুন ও পরিষ্কার রাখুন।

ঠিক কোন লক্ষণগুলো দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, প্রচণ্ড পেট ব্যথা ও অত্যধিক পানির পিপাসা থাকলে,  ঘন ঘন বমি বা বমি বন্ধ না হলে, রক্তবমি বা কালো পায়খানা হলে, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হলে, ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্র¯্রাব না হলে, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হলে, ডায়রিয়া হলে ও অত্যধিক শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করলে, গর্ভবতী মা, নবজাতক শিশু, বয়স্ক রোগী, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ থাকলে,  শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক কমে গেলে (শরীর অস্বাভাবিক ঠান্ডা হয়ে গেলে)।  এ ছাড়া এগুলো লক্ষণ না থাকলে বাড়িতে বসেও চিকিৎসা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে রোগীর কোনও বিপদ চিহ্ন না থাকলে মুখে পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে পারলে এবং প্রতি ৬ ঘণ্টায় অন্তত একবার প্র¯্রাব হলে এ সময় পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণযুক্ত তরল খাবার যেমন: খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অধিদফতর।
এ ছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ব্যথার ওষুধ না খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে পূর্ণবয়স্কদের জ্বর বা ব্যথাজনিত কারণে সর্বোচ্চ দৈনিক ৩ গ্রাম বা ৫০০ মিলি গ্রামের ছয়টি ট্যাবলেট, বাচ্চাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া যাবে। পাশাপাশি জ্বর কমাতে কুসুমগরম পানি দিয়ে সারা শরীর মুছে  ফেলতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে  ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু প্রাণ কাড়ে ১০৫ জনের।

স্বপ্না

সম্পর্কিত বিষয়:

×